পাহাড়ে কঠিন চীবর দান উৎসব পালন বাঁধার নাটের গুরু দেবাশীষ রায়
ডেস্ক রিপোর্ট:
সারাদেশে যখন উৎসব মুখর পরিবেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অস্টমী ও নবমী দূর্গাপূজা পালিত হচ্ছে ঠিক সেই সময় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে কঠিন চীবর দান উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ভিক্ষু সংঘ নামের একটি জোট।
কঠিন চীবর দান মূলত বৌদ্ধ ধর্মের একটি ধর্মীয় আচার ও উৎসব, যা সাধারণত বাংলা চন্দ্রপঞ্জিকা অনুযায়ী প্রবারণা পূর্ণিমা (শারদ পূর্ণিমা বা আশ্বিন মাস মাসের পূর্ণিমা) পালনের এক মাসের মধ্যে যেকোনো সুবিধাজনক সময়ে পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে কঠিন-চীবর নামে বিশেষ পোশাক দান করা হয়। ধর্মাবলম্বীগণ পূণ্যের আশায় প্রতি বছর এভাবে চীবরসহ ভিক্ষুদের অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রীও দান করে থাকেন। কঠিন চীবর হলো চার খণ্ডের পরিধেয় বস্ত্র, যাতে রয়েছে দোয়াজিক, অন্তর্বাস, চীবর ও কটিবন্ধনী।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত সংঘের নামে কঠিন চীবর দান বর্জনের আহ্বান জানানো হলেও স্থানীয়দের ধারণা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করেছেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় স্বয়ং। মূলত তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি হাসিল না হওয়ায় অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তিনি ভিক্ষু সংঘকে এই সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছেন বলে স্থানীয় সচেতন মহলে আলোচনা রয়েছে।
মূলত জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সরকার গঠনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে চাকমা সার্কেল চিফের স্ত্রী ইয়ান ইয়ানের নাম ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হলেও এবং কোন কোন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও পরবর্তীকালে তিনি উপদেষ্টা পরিষদে ঠাঁই পাননি। তার পরিবর্তে ঠাঁই পেয়েছেন বর্তমান উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। কিন্তু এই নিয়োগ মেনে নিতে পারেননি ইয়ান ইয়ান। তিনি নিজে নেতৃত্ব দিয়ে পাহাড়ের ও সমতলের কিছু তরুণ শিক্ষার্থী ও নারীদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাড়ীর সামনে অবস্থান এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। কিন্তু এতে কাজ হাসিল না হওয়ায় তারা ভিন্ন পথে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করতে শুরু করেন। এর অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাহাড়ি তরুণদের কাছে জনপ্রিয় ইসুগুলো উসকে দিয়ে পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে। এবং কিছুটা সফল হয়। এই সংঘর্ষে বেশ কিছু পাহাড়ি- বাঙালি হতাহত হয়।
পরিস্থিতি সামলাতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চার উপদেষ্টা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাগণ পাহাড়ে সফরে গেলে চাকমা সার্কেল চিফ তার গোপন অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়কে সংবিধান সংস্কার কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। কিন্তু এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সারা বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠে। তার মত একজন বিতর্কিত ও বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার দায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে সংবিধান সংস্কারের মত গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে মেনে নিতে পারেনি দেশের সাধারণ জনগণ। ফলে তাদের প্রতিবাদের মুখে সরকার দেবাশীষ রায়ের নাম বাদ দিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এতে দ্বিতীয়বারের মতো ব্যক্তিগত লক্ষ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ও তার স্ত্রী ইয়ান ইয়ান নতুন করে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি হিন্দুদের দুর্গাপূজা ও বৌদ্ধদের কঠিন চীবর দানের মত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান বয়কট করে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চিত্র তুলে ধরে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করেন।
কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায় তাদের এই ষড়যন্ত্রের পাতা ফাঁদে পা না দেয়নি। ফলে সারা দেশের মতো পাহাড়ের তিন জেলায় উৎসব মুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু নিজে বৌদ্ধ হওয়ায় এবং বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে তার ব্যক্তিগত প্রভাব থাকায় সেই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দেবাশীষ রায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বাধ্য করেন কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান বয়কট করতে। আর এই বিষয়টি ভারত সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করে বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চরিত্রে সাম্প্রদায়িকতার কালিমা লিপ্ত করার জন্য ব্যাপকভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিষয়টা বুঝতে পেরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কমিউনিটি ও ধর্মীয় শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে তারাও সরকারকে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান উৎসবমুখর পরিবেশে করার জন্য প্রতিশ্রুতি দেন। এদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অব. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, এবং সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান সরাসরি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাথে বৈঠক করেন। তারা কঠিন চীবর অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের জন্য সকল ধরনের নিরাপত্তা ও সহায়তার আশ্বাস দেন। এ সময় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও তাদের আশ্বাসে আস্থা স্থাপন করে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান পালনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন।
এই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা গত ১০ অক্টোবর বৈঠক করে সরকারের আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে সারা বাংলাদেশে উৎসব মুখর পরিবেশে কঠিন চীবর অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য বিবৃতি প্রকাশ করেন। রাঙ্গামাটির বনরুপা ভিক্ষু সংঘ দেবাশীষ রায়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কঠিন কিবোর্ড দান অনুষ্ঠান বর্জন করলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষত বান্দরবানের এবং কক্সবাজারের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত পোষণ করেননি। স্থানীয় শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অভিমত, চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় প্রভাব খাটিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দান করছেন। মূলত তার ব্যক্তিগত জিঘাংসা এবং দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ক্রীড়নক হিসেবে হিসেবে তিনি এই রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
শুধু এবারই প্রথম নয়। এই চাকমা সার্কেল চিফ দেবাশীষ রায় অতীতেও বহুবার ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের ক্রীড়নক হিসেবে পাহাড় অশান্ত করতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্কিত করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করতে দেখা গেছে। দেশে-বিদেশে এ ধরনের বহু সভা সেমিনার ও কার্যক্রমের সাথে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে এবং মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তার এ ধরনের কার্যক্রমের অনেক ডকুমেন্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জব্দ করেছে তার কাছ থেকে। তাই দেশের স্বার্থে এ ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী পরিবারকে অতি দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য দেশবাসী সরকারের কাছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রবল ভাবে দাবি জানিয়ে আসছে। এদেরকে অতি দ্রুত থামাতে না পারলে তারা দেশে ও বিদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব অখন্ডতার বিষয়ে ভয়ানক ক্ষতি করে ফেলবে বলেন নাগরিকদের ধারণা।
ফেসবুক থেকে নেয়া।