ভারতের উচিত তার দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: তথ্য উপদেষ্টা

ভারতের উচিত তার দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: তথ্য উপদেষ্টা

ভারতের উচিত তার দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: তথ্য উপদেষ্টা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়াকে ভারতের ‘অনধিকার চর্চা’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

বুধবার তিনি বলেন, “আমরা মনে করে করি, এই ধরনের স্টেটমেন্ট দেওয়া ভারতের অনধিকার চর্চা। এখানে তারা ঘটনাকে আরও উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ভারতের উচিৎ তার নিজের দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিতে কাজ করা।”

নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা ভারতকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি এবং আওয়ামী লীগের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা যেন ভারত সাবস্ক্রাইব না করে।”

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ছাত্র-জনতা। এর মধ্যে ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়। সেদিন জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সমাবেশে অংশ নেওয়া লোকজন। এ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা তৈরি হয়।

পরে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানায় একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত)। সেই মামলায় ২৫ নভেম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয় চিন্ময় দাসকে। পরে তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৬ নভেম্বর তাকে আদালতে তোলা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আদালতে চিন্ময়কে তোলার সময় সেখানে জড়ো হন তার অনুসারী-সমর্থকরা। এক পর্যায়ে আদালতের অদূরে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। সেসময় অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

ঘটনাটির সঙ্গে সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়, “বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার ও জামিন নাকচ করার বিষয়টি আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি। বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর উগ্রপন্থি গোষ্ঠীর একাধিক হামলার পরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের পাশাপাশি চুরি ও ভাঙচুর এবং দেবতা ও মন্দিরের অপবিত্রতার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় জড়িতরা যখন ধরাছোঁয়ার বাইরে, তখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে যৌক্তিক দাবি পেশ করা একজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা উচিত নয়। আমরা চিন্ময় দাসের গ্রেফতারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারী সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টিও উদ্বেগের সঙ্গে খেয়াল করছি।”

সরকারকে হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘুর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

ভারতের এই বিবৃতির জবাবে কড়া বিবৃতি দেয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যেখানে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ একটি বিষয়ে ২৬ নভেম্বর গণমাধ্যমে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা একটি বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। অত্যন্ত হতাশা ও গভীরভাবে ব্যথিত হয়ে বাংলাদেশ সরকার উল্লেখ করেছে যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেফতার করার পর থেকে কোনও কোনও মহল ভুল ধারণা দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বলেছে যে, এই ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি শুধু সত্যের ভুল উপস্থাপনই নয়, বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থী।

“বিবৃতিটি সব ধর্মের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সম্প্রীতি, এই বিষয়ে সরকার-জনগণের প্রতিশ্রুতি ও প্রচেষ্টাকেও প্রতিফলিত করে না।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার জনগণের বিরুদ্ধে স্থূল মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধীদের দায়মুক্তির সংস্কৃতি চূড়ান্তভাবে শেষ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, একইভাবে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সমান আচরণ করে, যা এই বিবৃতিতে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করে যে, প্রত্যেক বাংলাদেশির তার ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, বজায় রাখা বা পালন করার বা বাধা ছাড়াই মতামত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। সব নাগরিকের, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারের একটি দায়িত্ব। গত মাসে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালনের মাধ্যমে এটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার আবারও বলতে চায় যে, দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সরকার বিচার বিভাগের কোনও কাজে হস্তক্ষেপ করে না। প্রশ্নাধীন বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।

বাংলাদেশ সরকার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে বলা হয়, মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যেকোনও মূল্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ বন্দর নগরীতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *