“রঙরাঙ পাখি” নয়, আগুনে পোড়া বনভূমি—পাহাড়ের বাস্তবতা কোথায় লুকাবে?

মোঃ সাইফুল ইসলাম
রঙে-ঢাকা রচনার আড়ালে যারা পাহাড়ের মানুষের পক্ষে কথা বলার দাবি করেন, তাঁরা একবারও কি ভেবেছেন—এই তথাকথিত ‘রঙরাঙ পাখিদের’ রক্ষার বুলি আওড়ানো জুম্মদের হাতেই যে হাজার হাজার হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে, তার দায় কে নেবে?
চাকমা সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায়ের স্ত্রী ইয়েন ইয়েন সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোষ্টে পাহাড়ের জাতিসত্তাসমূহের নিপীড়নের কথা বলেছেন। দারুণ সাহিত্যকাতর, প্রতীক-ভিত্তিক লেখাটি “রঙরাঙ পাখি”র করুণ কাহিনি তুলে ধরেছে, যেখানে তারা নাকি শুধুই মঞ্চের রঙিন প্রপস—বাস্তবে নিপীড়িত। কিন্তু সেই লেখায় একটি শব্দও নেই পাহাড়ের পরিবেশ ধ্বংসের কথা, নেই জুম চাষের নামে আগুন লাগিয়ে বনজঙ্গল জ্বালিয়ে ফেলার নিষ্ঠুর বাস্তবতার উল্লেখ।
কিন্তু বাস্তবতা এতটা ‘কাব্যিক’ নয়। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শুধু এ বছর তিন পার্বত্য জেলায় (খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি) ২২ হাজার হেক্টরেরও বেশি টিলাভূমি পুড়িয়ে জুমচাষের প্রস্তুতি নিয়েছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরাই। প্রতিবার এই সময়টাতে, মার্চ-এপ্রিল জুড়ে, আগুন লাগানো হয়। পুড়ে ছাই হয় সবুজ বন, ধ্বংস হয় বন্যপ্রাণী, মারা যায় উপকারী অণুজীব। এই আগুনে গত দশ বছরে মৃত্যু ঘটেছে কমপক্ষে ১৫ জনের। ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে শত শত।
“রঙরঙ পাখি”র গল্প শুনিয়ে কেউ যদি মনে করিয়ে দেন রাষ্ট্র কেবল সংস্কৃতির জন্য পাহাড়িদের তুলে ধরে, কিন্তু টিকে থাকার অধিকার দেয় না—তবে জিজ্ঞেস করতেই হয়, হাজার হাজার একর বন উজাড় করে পাহাড়ের এই ‘পাখি’দের কারা আগুন ধরিয়ে দেয়? পরিবেশ বিধ্বস্ত করে যে চাষাবাদ, তা সংস্কৃতির অংশ হিসেবে প্রশ্রয় পেলে, রাষ্ট্র কি তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না?
উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রযন্ত্র যেমন অন্যায় করে, তেমনি “সংস্কৃতি”র নামে পাহাড়ে বসবাসকারী কিছু কর্তৃত্বশালী গোষ্ঠী নিজেরাও দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। রোমান্টিক প্রতীকের আড়ালে যাদের দায় ধামাচাপা পড়ে, তাদেরকে প্রশ্ন করতে হবে—আপনারা কি আসলেই পাহাড়ের সবার পক্ষে কথা বলেন, নাকি শুধু নিজ নিজ গোষ্ঠীর সুবিধাজনক অবস্থান রক্ষা করেন?
যদি সত্যিই পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য, সংস্কৃতি, এবং বাসযোগ্যতা নিয়ে চিন্তা থাকে—তবে বন আগুন দিয়ে জ্বালানো বন্ধ করুন। “রঙরাঙ পাখি”র কান্নার গল্প নয়, দরকার সম্মিলিত দায়বোধের ভাষা। আর সেই ভাষায় নিজের ভূমিকার দায় এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই—চাকমা সার্কেল হোন, সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী হোন, কিংবা বার্মিজ নাগরিক হোন না কেন।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।