পার্বত্য চুক্তির বাস্তবতা ও প্রপাগান্ডার জবাব

পার্বত্য চুক্তির বাস্তবতা ও প্রপাগান্ডার জবাব

পার্বত্য চুক্তির বাস্তবতা ও প্রপাগান্ডার জবাব
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

সম্প্রতি “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন” নামধারী একটি গোষ্ঠী রাজধানীতে দিনব্যাপী গণসংযোগ ও পথসভা করেছে। সেখানে তারা দাবি করেছে যে, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ, সংলাপ করছে না, ভূমি সমস্যা সমাধান করছে না এবং পাহাড়িদের উপর তথাকথিত “সেনাশাসন” চালিয়ে যাচ্ছে। এ বক্তব্যগুলোর কিছু অংশ বাস্তবতার নিরিখে বিবেচনা করা হলেও, বেশ কিছু দাবি আদর্শিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এমনকি সংবিধানবিরোধী।

প্রথমেই বলা উচিত, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক উদ্যোগ, যার উদ্দেশ্য ছিল দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা। এই চুক্তির বেশির ভাগ ধারা—প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ—সরকার ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন করেছে। জেলা পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, আঞ্চলিক পরিষদ গঠন, পার্বত্য ভূমি কমিশন গঠন, প্রশাসনে স্থানীয়দের অগ্রাধিকারসহ বহু দফা বাস্তবে রূপ পেয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসে, এরা কেন এখনও “বাস্তবায়ন হয়নি” বলে প্রচার চালাচ্ছে?

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এই চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী সংগঠন জেএসএস (জনসংহতি সমিতি) কি তাদের অস্ত্র সমর্পণ করেছে? চুক্তির মূল অংশ ছিল অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সশস্ত্র রাজনীতি পরিহার করে গণতান্ত্রিক পথে আসা। অথচ জেএসএস ও তাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো এখনো পাহাড়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, গোপন ক্যাম্প এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে খুন করার রাজনীতি করছে। তাহলে একপাক্ষিকভাবে সরকারকে দোষারোপ করা কি ন্যায়সঙ্গত?

আরেকটি গুরুতর বিষয়—এই কর্মসূচিতে বারবার “আদিবাসী” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে “আদিবাসী” শব্দের কোনো স্বীকৃতি নেই। সংবিধান বলছে—সব নাগরিক সমান, এবং এদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর সংস্কৃতি ও অধিকার সংরক্ষণের কথাও সেখানে বলা হয়েছে। কিন্তু “আদিবাসী” শব্দ ব্যবহার করে আলাদা জাতিসত্তার দাবি রাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করে। এমন শব্দ ও ভাষা ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘soft secessionism’ বা নরম বিচ্ছিন্নতাবাদ ছড়ানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

এদের বক্তব্যে “সেনাশাসনের” মতো শব্দ ব্যবহার করে সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা খাটো করার চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ পাহাড়ে শান্তি, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী এক অবিচ্ছেদ্য ভূমিকা পালন করছে। তারা হাসপাতাল, রাস্তা, স্কুল গড়ে দিচ্ছে, আবার সন্ত্রাস দমনেও মুখ্য ভূমিকা রাখছে।

পরিশেষে বলব—পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের যে অংশগুলো এখনও অসম্পূর্ণ, সেগুলোর বাস্তবায়ন অবশ্যই হওয়া উচিত। তবে তা হওয়া উচিত দুই পক্ষের আন্তরিকতা ও আইনের সীমার মধ্যে থেকে। চুক্তি বাস্তবায়ন চাই, কিন্তু রাষ্ট্রবিরোধী কথাবার্তা বা একপাক্ষিক মিথ্যাচার কোনোভাবেই নয়।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।