গুজবের রাজনীতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিকল্পিত অস্থিরতা

গুজবের রাজনীতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিকল্পিত অস্থিরতা

গুজবের রাজনীতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিকল্পিত অস্থিরতা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

গতকাল রাতভর পার্বত্য চট্টগ্রামের আকাশ যেন গুজবের কালো ছায়ায় ছেয়ে গিয়েছিল। নানিয়ারচরের ত্রিপুরাছড়ি আর্মি ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া এক ‘নির্মম হত্যার’ গল্প গোটা অঞ্চলের জনমানসে তীব্র আতঙ্ক ও বিভ্রান্তির জন্ম দেয়। অথচ বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন—এটি ছিল একটি দুঃখজনক আত্মহত্যার ঘটনা, যা গভীরভাবে বিশ্লেষণ ও সমবেদনার দাবি রাখে, কিন্তু রাজনৈতিক অপচিন্তাধারার লালনকারী একটি চক্র এই ঘটনাকেও পরিণত করেছে প্রোপাগান্ডার জ্বালানিতে।

ঘটনার প্রকৃত তথ্য অনুযায়ী, সেনা সদস্য শহিদুল ইসলাম আত্মহত্যা করেছেন। তবে এই সংবেদনশীল ঘটনার প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের আগেই কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এটিকে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের গুলিতে ‘হত্যা’ হিসেবে প্রচার করতে উঠে পড়ে লাগে। এমনকি ফেসবুক পোস্টে নির্দিষ্ট সময়, স্থান, এবং ‘নিহতের মরদেহ হেলিকপ্টারে নেওয়া হচ্ছে’—এমন নাটকীয় তথ্য জুড়ে দিয়ে পুরো গল্পটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করা হয়।

আর এই গুজবের উৎসস্থলও সন্দেহজনকভাবে পরিচিত—আওয়ামী লীগ ঘরানার কিছু ব্যক্তি ও সংগঠিত ডিজিটাল গ্রুপ, যার মধ্যে আছেন সুশান্ত দাশ গুপ্ত, নুরুল আজিম রনির মতো ব্যক্তিরা। তারা কি নিজেদের রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করে একটি অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চেয়েছেন? প্রশ্ন উঠছেই।

গুজবের রাজনীতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিকল্পিত অস্থিরতা

গভীর রাতে একটি গুজব ছড়িয়ে দিয়ে পুরো একটি জনপদকে আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দেওয়া কি নিছক ভুল না কি সচেতন রাজনৈতিক স্টান্ট? যে সময়ে দেশের নানা জায়গায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, সে সময় পার্বত্য অঞ্চলে অস্থিরতা সৃষ্টি করে কারা ফায়দা লুটতে চায়?

এখানেই উঠে আসে আরেকটি গুরুতর প্রশ্ন—পতিত স্বৈরাচারের পুনরুত্থানে আগ্রহী গোষ্ঠীগুলো কি আবারও পার্বত্য অঞ্চলের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের জায়গা করে নিতে চায়? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই অপচেষ্টা নতুন নয়। গুজবকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক জমিন তৈরি করার এক কদর্য সংস্কৃতি দেশে বহু পুরনো। তবে এবার এর শিকার হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ, যারা প্রতিনিয়ত সহিংসতা আর অস্থিরতার ভয়ে দিন কাটান।

আমরা এই ঘটনার কঠোর নিন্দা জানাই এবং দাবি জানাই—যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুজব ছড়িয়ে সামাজিক স্থিতি নষ্ট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত এবং দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। পাশাপাশি, জাতীয় পর্যায়ে গুজবের বিরুদ্ধে কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা এবং জনগণকে সচেতন করার উদ্যোগ আরও জোরদার করা হোক।

গুজব একটি নীরব বিষ—তা সত্যকে মুছে দেয়, ভয়কে প্রতিষ্ঠা করে, আর বিভাজনের রাজনীতি আরও গভীর করে তোলে। আর সেই রাজনীতিই এখন সবচেয়ে বড় হুমকি আমাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।