চাকসুতে ‘আদিবাসী’ পদ সৃষ্টির দাবি: উদ্দেশ্য কী?

চাকসুতে ‘আদিবাসী’ পদ সৃষ্টির দাবি: উদ্দেশ্য কী?

চাকসুতে ‘আদিবাসী’ পদ সৃষ্টির দাবি: উদ্দেশ্য কী?
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) গঠনতন্ত্রে তথাকথিত ‘আদিবাসী’ বিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছাত্র সংগঠন। তবে এ দাবিকে অনেকেই দেখছেন একটি সুপরিকল্পিত শব্দ রাজনীতি ও সাংবিধানিক বিভ্রান্তি তৈরির অপচেষ্টা হিসেবে।

গতকাল সোমবার (২৬ মে) দুপুর ১টায় চাকসু ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সহ ত্রিপুরা, মারমা ও ওঁরাও ছাত্র সংগঠনের নেতারা এ দাবি তোলেন।

লিখিত বক্তব্যে পিসিপি চবি শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা বলেন, “আমরা চাকসুর গঠনতন্ত্রে আদিবাসী বা সংখ্যালঘু জাতিসত্তাবিষয়ক সম্পাদক পদ সৃষ্টির দাবি জানাচ্ছি।”

সংবিধান যেখানে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’, সেখানে ‘আদিবাসী’ কেন?

বাংলাদেশের সংবিধানের ২৩ক অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’র সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য, ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক পরিচিতি সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। সেখানে ‘আদিবাসী’ শব্দটির কোনো স্বীকৃতি নেই। অথচ এই শব্দটি বারবার ব্যবহারের মাধ্যমে একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিচিতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে—যা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান এবং ইতিহাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

‘আদিবাসী’ শব্দটির পেছনে রয়েছে একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, যেখানে রাষ্ট্রবিরোধী দাবির পেছনে ‘উত্পাটিত জাতি’ তত্ত্ব ব্যবহার করা হয়। এক শ্রেণির গোষ্ঠী এ শব্দ ব্যবহার করে নিজেদের ভূখণ্ডগত স্বায়ত্তশাসন, স্বতন্ত্র জাতিসত্তা ও এমনকি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করতে চায়, যা একটি একক, অবিভাজ্য বাংলাদেশের আদর্শের পরিপন্থী।

ছাত্র রাজনীতিতে বিভাজনমূলক পদ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা

চাকসু গঠনতন্ত্রে ‘আদিবাসী’ নামে একটি পদ প্রতিষ্ঠার দাবি ছাত্র রাজনীতিতে জাতিগত বিভাজন ও দ্বন্দ্ব উসকে দিতে পারে। বরং, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার, অংশগ্রহণ ও সাংস্কৃতিক বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিষয়ক সম্পাদক’ নামে একটি অরাজনৈতিক, সাংবিধানিক স্বীকৃতির পদ বিবেচনা করা যেত।

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে আরও যেসব পদ সৃষ্টির দাবি জানানো হয়েছে—যেমন নারী বিষয়ক সম্পাদক, পরিবহন ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক—তা যৌক্তিক আলোচনার দাবি রাখে। কিন্তু একমাত্র ‘আদিবাসী’ শব্দটির ব্যবহারে রয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দৃষ্টিভঙ্গি, যা ছাত্র রাজনীতিতে অস্পষ্ট জাতিগত পরিচয়ের লেবেল বসিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

একটি শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসের স্বার্থে দায়িত্বশীলতা দরকার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সব ধর্ম, ভাষা ও নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীর জন্য একটি যৌথ চেতনার শিক্ষাঙ্গন। এখানে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উদযাপনের নামে জাতিগত বিশেষায়নের পদ তৈরি করলে তা শিক্ষার পরিবেশে বিভাজন ও অবিশ্বাস তৈরি করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব হবে—সাংবিধানিক পরিপন্থী কোনো পদ বা শব্দ ব্যবহার যাতে প্রতিষ্ঠা না পায়, তা নিশ্চিত করা। ছাত্র রাজনীতিকে জাতীয় ঐক্য ও সাংবিধানিক চেতনায় ফিরিয়ে আনার এই সময়ে বিভাজন নয়, দরকার সমন্বয় ও দায়িত্বশীলতা।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

You may have missed