রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদারের গাড়ি বিলাস
![]()
নিউজ ডেস্ক
সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর থেকে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান থেকে অনেকটা ছিলেন নিভৃতেই। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক সরকার পরিবর্তনের পর ভাগ্য খুলল কাজল তালুকদারের। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না তাকে।
আগের চেয়ারম্যানদের ‘অশিক্ষিত, মুর্খ’ মন্তব্য করা ছাড়াও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে সখ্যতার গুঞ্জন রয়েছে। এবার অর্থবছর শুরুর আগেই রাজস্ব খাতের টাকা দিয়ে গাড়ি কিনে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। চেয়ারম্যানের ‘গাড়ি বিলাস’ নিয়ে ক্ষোভ খোদ সদস্যদের মাঝেও।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৬ আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই বছরের বেশি সময় ডিএই রাঙামাটি কার্যালয়ের উপপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। উপপরিচালকের দায়িত্ব থেকেই অবসর গ্রহণ করেন তিনি। এরপর এক যুগের বেশি সময় নিভৃতে থাকলেও হঠাৎ আলোচনায় আসেন কাজল তালুকদার। নিয়োগ পান রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবেই।

২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর কৃষিবিদ কাজল তালুকদারকে চেয়ারম্যান মনোনীত করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই বিতর্ক ও সমালোচনার মধ্যে ১০ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করে কাজল তালুকদারের নেতৃত্বাধীন জেলা পরিষদ পর্ষদ। দায়িত্ব গ্রহণের দিনও বিক্ষোভ হয় জেলা পরিষদ চত্বরে। এছাড়া পরবর্তীতে উচ্চআদালতে এক রিটের প্রেক্ষিতে জেলা পরিষদ পুনর্গঠন কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চান আদালত এবং দুই জেলা পরিষদ সদস্যকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার আদেশও দেন আদালত।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাজস্ব খাতে জেলা পরিষদ ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অগ্রিম আয় করে। তবে অর্থবছর শুরুর আগেই সে টাকা দিয়ে একটি ‘পাজেরো স্পোর্টস’ গাড়ি ক্রয় করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। গাড়ি ক্রয় খাতে মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। চলতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে গাড়িটি ক্রয় করা হয়। গাড়ির সামনেই নাম্বার প্লেটে লেখা রয়েছে, ‘চেয়ারম্যান; রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ; আবেদিত’। এ নিয়ে জেলা পরিষদ সদস্যদের মধ্যেই মতদ্বৈধতা তৈরি হয়। যদিও প্রকাশ্যে কেউ কথা বলছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলা পরিষদ সদস্য জানান, চেয়ারম্যানের ব্যবহারের জন্য গাড়ি ক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে সদস্যদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। চেয়ারম্যান অনেকটা নিজের ইচ্ছাতেই গাড়িটি ক্রয় করেন। রাজস্ব খাতের এই টাকা দিয়ে বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ থাকলেও চেয়ারম্যান অর্থবছর শুরুর আগেই সেই টাকার বেশিরভাগ খরচ করে ফেলেছেন।
কৃষি কর্মকর্তা কাজল তালুকদার রাঙামাটি জেলা শহরের তবলছড়ি আর্ট কাউন্সিল এলাকার বাসিন্দা। তার আপন ছোট ভাই দীপন তালুকদার দীপু রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি। এছাড়া রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এবং কাজল তালুকদার সম্পর্কে চাচাতো-জেঠাতো ভাই। ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দীপংকর তালুকদারের পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট চান কাজল তালুকদার। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হন তিনি। কাজল তালুকদারের নেতৃত্বাধীন জেলা পরিষদ পর্ষদে বিগত ‘সরকারের ছানি’ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
রাঙামাটি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও রাঙামাটি পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. সাইফুল ইসলাম ভূট্টো বলেন, ব্যক্তি হিসেবে কাজল তালুকদারের সামাজিক ও রাজনৈতিক কোনো নৈতিক চরিত্র নেই। কখনো আওয়ামী লীগ আবার কখনো বিএনপি। ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদারের ভোট করে সরকার পতনের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েছে কাজল। তার ভাই দীপন তালুকদার এখন জেলা বিএনপির সভাপতি হলেও আগে করতো জাতীয় পার্টি। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কাজল তালুকদার নানান বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অর্থবছর শুরুর আগেই রাজস্ব খাতের টাকা দিয়ে গাড়ি বিলাস করছে। জেলা পরিষদ সদস্যের বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ হওয়ায় তারা এসব ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ করতে পারে না।
গাড়ি ক্রয় প্রসঙ্গে জানতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
যদিও এ প্রসঙ্গে জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম বলেন, ‘জুন মাসের শুরুর দিকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চেয়ারম্যানের জন্য যে গাড়িটি ক্রয় করা হয়েছে; সেটি বাবদ ১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিলের টাকা নানান খাতে গেছে। সরকারের অনুমোদন আছে নিজস্ব তহবিলের টাকায় গাড়িটি কেনার জন্য। এই গাড়িটি তো কাজল তালুকদার নিয়ে যাচ্ছেন না, কোনো সদস্যও নিয়ে যাবেন না। গাড়িটা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের গাড়ি। জেলা পরিষদের আয় থেকে গাড়িটা কেনা হয়েছে। এই গাড়ি কেনার অনুমোদন আগের পরিষদের সময় ছিল। গাড়ি কিনে ফেলছে বিষয়টা এরকম না, তার গাড়ি অচল হয়ে গেছে বলেই কেনা হয়েছে। সরকার গাড়ি সচল থাকলে নতুন গাড়ি কেনার অনুমতি কখনোই দেয় না। আমরা আরও সিদ্ধান্তে যাব, আমাদের যত গাড়ি এখনো আছে সেগুলা আর চালাব না। সবগুলাই অচল। এগুলা চালানো মানে অন্যায়।’
তথ্যসূত্র: নাগরিক অনলাইন।