ঢাবি: ছাত্রদল কি তবে পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ক্রীড়নক হয়ে উঠছে?

ঢাবি: ছাত্রদল কি তবে পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ক্রীড়নক হয়ে উঠছে?

ঢাবি: ছাত্রদল কি তবে পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ক্রীড়নক হয়ে উঠছে?
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময়ই দেশের রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র। এখানকার ছাত্র রাজনীতি ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির উর্বর ক্ষেত্র। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে—এই রাজনীতি কি আদর্শিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভ্রান্তির দিকে এগোচ্ছে? বিশেষ করে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের কর্মকাণ্ড এবং সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্যানেল ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে এমন প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে।

প্রথমত, ২১ আগস্ট রাতে সময় টিভির সম্পাদকীয় অনুষ্ঠানে ডাকসু নির্বাচনের প্রার্থীদের আলোচনায় ছাত্রদল মনোনীত জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিমের বক্তব্য অনেককে বিস্মিত করেছে। জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির মনোনীত জিএসএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) মনোনীত জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদারের বক্তব্যের পর একপর্যায়ে ছাত্রদলের শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, “পাঠ্যবইয়ে আদিবাসী শব্দ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে যারা আদিবাসীদের উপর হামলা করেন, তারা আজকে আদিবাসী নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলে।”

এখানে মূল প্রশ্ন—তিনি কি বাংলাদেশের সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতির পরিপন্থী কোনো শব্দচয়নকে স্বীকৃতি দিলেন? আমাদের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে—বাংলাদেশে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, আদিবাসী নয়। রাষ্ট্র যখন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন সই করেনি, তখন একজন জাতীয় রাজনৈতিক দলের ছাত্রনেতা কীভাবে টেলিভিশনের পর্দায় প্রকাশ্যে সংবিধানের বাইরে গিয়ে একটি শব্দের রাজনৈতিক বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করলেন? এটি কি নিছক অজ্ঞতা, নাকি রাজনৈতিক কৌশল বা নির্বাচনী ফায়দা নিতে পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের ভোট ব্যাংককে টানার এক সস্তা প্রচেষ্টা?

দ্বিতীয়ত, তার চেয়েও বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে ছাত্রদলের ঘোষিত ডাকসু প্যানেল নিয়ে। ২০ আগস্ট অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করা হয়। সেখানে ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রার্থী করা হয়েছে চিম চিম্যা চাকমাকে। সাধারণভাবে এ তথ্য হয়তো তেমন কিছু মনে হতো না, কিন্তু যাঁর পারিবারিক পটভূমি এবং রাজনৈতিক সংযোগ জানা গেল, তা প্রশ্ন তোলে। চিম চিম্যা চাকমার বাবা রঞ্জন মনি চাকমা, যিনি প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ (মূল) এর সামরিক বিভাগের বর্তমান ফিল্ড কমান্ডার, একজন পলাতক আসামি এবং একাধিক হত্যা, অপহরণ ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালে নানিয়ারচরের কালুময় চাকমা পুড়িয়ে হত্যা, উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা হত্যা এবং বাঘাইছড়িতে জেএসএস কর্মী বন কুসুম চাকমা হত্যাসহ নানা অপরাধের মামলায় তাঁর নাম উঠে এসেছে।

ডাকসু নির্বাচন: ছাত্রদলের প্যানেলে ইউপিডিএফ ফিল্ড কমান্ডারের ছেলে চিম চিম্যা চাকমা!

প্রশ্ন হচ্ছে—এই পরিবারিক পটভূমির সঙ্গে যুক্ত একজনকে জাতীয় রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন কেন ডাকসুর মতো সর্বোচ্চ ছাত্র রাজনীতির মঞ্চে প্রার্থী করল? এটি কি কেবলমাত্র রাজনৈতিক কৌশল, নাকি পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একটি অঘোষিত যোগাযোগের ইঙ্গিত? আর যদি তা-ই হয়, তবে এটি শুধু একটি দলের জন্য নয়, দেশের ছাত্ররাজনীতির জন্য ভয়ঙ্কর এক বার্তা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে রাজনৈতিক মতাদর্শ, প্রতিযোগিতা ও নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত পরিবার বা বিতর্কিত বক্তব্য এখানে বৈধতা পায়, তখন তা শুধু এক রাজনৈতিক দলের দুর্বলতার পরিচয় নয় বরং জাতীয় নিরাপত্তা এবং ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তোলে।

এনসিটিবির সামনে উপজাতি সন্ত্রাসী ও বাম সংগঠনের হামলায় ১৪ ছাত্র আহত

রাজনৈতিক লাভের জন্য পাহাড়ের সংকটকে ব্যবহার করার চেষ্টা নতুন কিছু নয়। তবে ঢাবির মতো একটি জাতীয় বিদ্যাপীঠে এমন গোষ্ঠীর প্রভাব বিস্তার কেবল আইনশৃঙ্খলার জন্য নয় বরং দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্যও ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণকে যে কোনো ধরনের সশস্ত্র বা বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতির ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকেও কলুষিত করতে পারে।

পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ গ্রাফিতি নিয়ে তুঘলকি: পালের গোদা রাখাল রাহা

প্রশ্ন উঠছে, ছাত্রদল কি শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার চাপে এসব ঝুঁকিপূর্ণ পথে হাঁটছে, নাকি তাদের ভেতরে কোনো গোষ্ঠী সচেতনভাবে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর দাবিকে মঞ্চ দিচ্ছে? যদি দ্বিতীয়টি সত্য হয়, তবে এটি শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতির বিষয় নয় বরং জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় হুমকি।

সবশেষ, ছাত্রদল যদি সত্যিই এমন কৌশল নিয়ে এগোতে থাকে, তবে তাদের জন্য পরিণাম সুখকর হবে না। বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সশস্ত্র গোষ্ঠীর ক্রীড়নক হয়ে ওঠা কেবল সংগঠনকেই নয়, পুরো জাতিকেও বিভক্তি ও অস্থিতিশীলতার পথে ঠেলে দিতে পারে। এই প্রশ্নের উত্তর তাদেরকেই দিতে হবে—তারা কি সত্যিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিকে পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতিয়ার বানাতে চাইছে?

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।