পাহাড়ে সাপের দংশন থেকে হ্রদের দুর্ঘটনা—সবখানেই মানুষের পাশে সেনাবাহিনী
![]()
নিউজ ডেস্ক
পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড় ও অগম্য অঞ্চলে সেনাবাহিনী শুধু নিরাপত্তার প্রতীক নয়, মানবিক সহায়তার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবেও মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। কখনো সাপের দংশনে আহত গ্রামীণ কৃষককে উদ্ধারে জীবন বাজি রেখে এগিয়ে আসা, আবার কখনো কাপ্তাই হ্রদে নৌকা ডুবির ঘটনায় যাত্রীদের নিরাপদে উদ্ধার— প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনীর দ্রুত ও সাহসী পদক্ষেপ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে, ফিরিয়ে দিয়েছে স্বস্তি ও আস্থা।

সিন্দুকছড়িতে সাপের কামড়ে আহত কৃষককে উদ্ধার করে চিকিৎসা
গত ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি জেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের মহাজন কারবারি পাড়ায় বিষধর সাপের দংশনে গুরুতর আহত হন স্থানীয় কৃষক জানিয়া চন্দ্র ত্রিপুরা (৫৮)। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সিন্দুকছড়ি জোনের একটি টহলদল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে প্রথমে মানিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করে।
সেনাবাহিনীর সময়োপযোগী পদক্ষেপে প্রাণে রক্ষা পান ওই কৃষক। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত। স্থানীয়দের ভাষায়, “যদি সেনাবাহিনী এত দ্রুত না আসতো, উনি হয়তো বাঁচতেন না।”

কাপ্তাই হ্রদে নৌকা ডুবি, সেনাবাহিনীর তৎপরতায় রক্ষা পায় নয়জন
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে রাঙামাটির জীবতলী এলাকায় নয়জন যাত্রী বহনকারী একটি বেসামরিক নৌকা ভারসাম্য হারিয়ে কাপ্তাই হ্রদে ডুবে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, নৌকার যাত্রীরা একপাশে চলে যাওয়ায় ভারসাম্য নষ্ট হয়ে হঠাৎই এটি উল্টে যায়।
ঘটনার খবর পেয়ে নিকটস্থ সেনাবাহিনীর টহলদল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান চালায়। তাদের দক্ষতা ও তৎপরতায় অল্প সময়ের মধ্যেই সকল যাত্রীকে নিরাপদে তীরে আনা সম্ভব হয়। সৌভাগ্যক্রমে কেউ হতাহত হয়নি। পরে ডুবে যাওয়া নৌকাটিও ভেসে তুলে স্থানীয়দের সহায়তায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পরবর্তীতে জানানো হয়, ওই এলাকায় সাময়িকভাবে নৌযান চলাচল সীমিত রাখা হয়েছে এবং চালক ও যাত্রীদের সতর্কভাবে চলাচলের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ক্যান্সার আক্রান্ত মা ও দরিদ্র ছাত্রীকে সহায়তা
রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ক্যান্সারে আক্রান্ত এক অসহায় মা ও দরিদ্র পাহাড়ি কলেজছাত্রীকে মানবিক সহায়তা প্রদান করে। ক্যান্সার আক্রান্ত মাকে নগদ আর্থিক অনুদান এবং কলেজছাত্রীকে পাঠ্যপুস্তক ও কলেজ ড্রেস প্রদান করা হয়। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর মোর্শেদ বলেন, “সেনাবাহিনী সবসময় দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।”

ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সহায়তা, সম্প্রীতির বার্তা
বান্দরবান রিজিয়নের রুমা জোনের জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বড়ুয়া পাড়ার দেব বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেন।
পাড়াবাসীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে তিনি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরেন। পরিদর্শন শেষে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয় এবং পাড়াবাসীর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

মিজোরাম ফেরত বম পরিবারকে সহায়তা ও নিরাপদে নিজ পাড়ায় প্রত্যাবর্তন
থানচি উপজেলার বম সম্প্রদায়ের পাঁচ সদস্যের পরিবারকে সেনাবাহিনী খাদ্যসামগ্রী সহায়তা প্রদান করে নিরাপদে তাদের নিজ পাড়ায় পৌঁছে দেন। দীর্ঘদিন ভারতের মিজোরামে অবস্থানের পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিবারটি নিরাপদে দেশে ফিরে আসে। সেনাবাহিনী নিশ্চিত করে, “আমরা শুধু নিরাপত্তা নয়, মানবিক দায়িত্বও পালন করছি।”
স্থানীয়রা সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি পাহাড়ে মানুষের আস্থা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশকে আরও সুদৃঢ় করবে।
মানুষের আস্থার প্রতীক
সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, “জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা ও কল্যাণে আমরা কাজ করছি। মানবিকতার দিকটিকেও আমরা দায়িত্বের অংশ হিসেবেই দেখি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,
সেনাবাহিনীর এই মানবিক ও তৎপর উদ্যোগগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে শুধু সহায়তা নয়, আশা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে কাজ করছে। পাহাড়ের দুর্গম এলাকায়, হ্রদের দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে অসহায় রোগী, সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী ও ফেরত যাত্রীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন—সবক্ষেত্রেই সেনাবাহিনী দ্রুত, সংযমী ও কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে মানুষের জীবন রক্ষা করছে। স্থানীয়রা বলেন, “সেনাবাহিনীর এমন কার্যক্রম পাহাড়ে শান্তি, সম্প্রীতি ও পারস্পরিক আস্থাকে সুদৃঢ় করছে।”
‘পাহাড়ে যেকোনো দুর্ঘটনা বা জরুরি পরিস্থিতিতে প্রথমেই সেনাবাহিনীকে পাশে পাওয়া যায়। তাদের দ্রুত সাড়া, সহমর্মিতা ও দায়িত্ববোধ এখন পাহাড়ের মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।’ বলেন স্থানীয়রা।
উল্লেখ্য, পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনীর মানবিকতার এই ধারাবাহিকতা প্রকৃতপক্ষে প্রশংসনীয় এবং সকলের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।