পিসিসিপির আন্দোলন-হুঁশিয়ারি: পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিত
![]()
নিউজ ডেস্ক
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আগামী ১৯ অক্টোবর রাঙ্গামাটিতে ডাকা শাখা কার্যালয়ের সভা অনিবার্য কারণবশত: স্থগিত ঘোষণা করেছে। কমিশনের প্রধান কার্যালয় খাগড়াছড়ির মাস্টারপাড়া থেকে আজ (১৬ অক্টোবর) জারি করা অফিসিয়াল স্মারকে সভা স্থগিত করার কথা জানানো হয়েছে। উপলক্ষ্য হিসেবে বলা হয়েছে—পরিবর্তীত তারিখ পরে জানানো হবে।
স্মারকে বিজ্ঞপ্তি ও অনুলিপি একটি বিস্তৃত সার্কেলে পাঠানো হয়েছে—যাতে কমিশনের চেয়ারম্যান, আঞ্চলিক পরিষদ, সার্কেল চীফ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ, বিভাগীয় কমিশনার ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষদের নাম উল্লেখ আছে।
সভা স্থগিতকরণের সিদ্ধান্ত আগেভাগে নয়—গত কয়েক দিন ধরে পাহাড়জুড়ে জোরালোভাবে উঠে আসা প্রতিবাদ, স্মারকলিপি এবং সংবাদ সম্মেলনের প্রেক্ষাপট শেষে আসে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখা ও কেন্দ্রীয় শাখাসহ খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে গতকাল ও আজ স্মারকলিপি, সংবাদ সম্মেলন ও অঞ্চলভিত্তিক কার্যক্রম সংগঠিত করে এই বৈঠক বাতিলের দাবি তোলেন। পিসিসিপি তাদের প্রতিষ্ঠিত ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কমিশনের কোনো বৈঠক রাঙামাটিতে করা যাবে না—এ দাবি ঘোষণা করে।
পিসিসিপি আন্দোলনের চলমান কৌশল সম্পর্কে জানিয়েছে—রাঙ্গামাটিতে বৈঠক হলে তারা দিনব্যাপী শহরজুড়ে অবস্থান, ঘেরাও ও অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করবে; এ হুমকি-সংকেত তুলে ধরেই তারা প্রশাসন ও কমিশনকে চাহিদা মেনে নেওয়ার দাবি জানায়।
পিসিসিপি উল্লেখ করে যে, কমিশনের বর্তমান গঠন ও কার্যপ্রণালীতে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ৫২ শতাংশ বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নেই; তাই কমিশনের রায় একপক্ষীয় ও সংবিধানবিরোধী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পিসিসিপি’র আট দফা দাবির মূল পয়েন্টগুলো সংক্ষেপে—
- কমিশনে জনসংখ্যা অনুপাতে সব জাতিগোষ্ঠীর সমতুল্য প্রতিনিধি নিশ্চিত করা
- ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির পূর্বে পূর্ণাঙ্গ ভূমি জরিপ সম্পন্ন করা
- ২০১৬ সালের সংশোধনী আইন ও সংবিধানবিরোধী ধারাসমূহ বাতিল করা
- ভূমি পরিচালনায় সমতল জেলা প্রশাসকের কাঠামো প্রযোজ্য করা
- কমিশনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসন নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
পিসিসিপি রাঙামাটি শাখার এক নেতা জানিয়েছিল—“জাতির অধিকার আদায়ে এটা আমাদের ঐক্যমতভিত্তিক দাবি; পিসিসিপি কখনও হাল ছাড়বে না।”
কমিশনের অফিসিয়াল স্মারকে সভা স্থগিত করার কারণ হিসেবে বিস্তারিত তথ্য না দিয়ে কেবল “অনিবার্য কারণবশত” উল্লেখ করা হয়েছে এবং পরবর্তী তারিখ পরে জানানো হবে বলেও বলা হয়েছে। স্মারক স্বাক্ষর করেছেন সচিব (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) মো. সাহাব উদ্দিন; স্মারক নং—পাচভূবিনিক/খাগড়া-৫৫। স্মারকটির কপি কমিশন চেয়ারম্যান, আঞ্চলিক ও জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা সংস্থাসহ ভূমি মন্ত্রণালয় ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
শীর্ষ স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা সূত্র থেকে বলা হয়েছে, চলমান রাজনৈতিক সংবেদনশীলতায় জনবহুল আন্দোলন-ঘটনার আশঙ্কা বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসন ও কমিশন বৈঠক স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে—অবশ্য এই সংক্রান্ত সবশেষ আনুষ্ঠানিক পক্ষপাতিত্ব কমিশনের স্মারকেই প্রাধান্য পাবে।
অপরদিকে, পিসিসিপি তাদের আন্দোলনের সফলতা হিসেবে আজকের স্থগিতাদেশের সম্পর্ককে তুলে ধরছে, গতকাল (১৫ অক্টোবর) খাগড়াছড়িতে স্মারকলিপি দেওয়ার পরে রাঙামাটিতে সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর আন্দোলনের হুমকি ঘোষণায়ই কমিশন বাধ্য হয়ে বৈঠক স্থগিত করেছে। পিসিসিপি বলছে—“এই সফলতা কেবল তাদের নয়; শান্তিপ্রিয় প্রতিটি মানুষের অংশগ্রহণের ফল।”
এই সিদ্ধান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি নীতিকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনার মধ্যে সাময়িক শিথিলতা এনেছে। তবে পিসিসিপি পুনরায় জোর দিয়েছে, তাদের ৮ দফা দাবি মেনে নেওয়া না হলে তারা বৃহৎ কর্মসূচি রূপ দিতে প্রস্তুত থাকবে; অন্যদিকে কমিশন এবং প্রশাসন এখন ‘সমঝোতার পথ’ খোঁজার কথাই বলছে।
নীতিনির্ধারকদের সামনে এখন কয়েকটি বিকল্প উপায় রয়েছে—(ক) কমিশনের গঠনতান্ত্রিক উপাদান পুনর্বিবেচনা করে প্রতিনিধিত্বমূলক সমন্বয় নিশ্চিত করা;
(খ) পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক ভূমি জরিপ ও তথ্যভিত্তিক রূপায়ণ করা;
(গ) নিরপেক্ষ সীমিত ফোরামে অংশগ্রহণমূলক আলোচনার ব্যবস্থা করা—যাতে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীধদারগণকেই অন্তর্ভুক্ত করে স্থায়ী সমাধানের পথে আগানো যায়।
প্রতিবাদকারী নাগরিক সংগঠনগুলোর দাবি এবং কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপ — উভয়ই পার্বত্য অঞ্চলের ভবিষ্যত ভূমিনীতি ও সামাজিক শান্তি-সম্প্রীতির ক্ষেত্রে নির্নায়ক প্রভাব ফেলবে। প্রশাসনকে এখন ত্বরান্বিতভাবে সংলাপ খুলতে এবং সকল পক্ষকে যুক্ত করে একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বের করতে হবে—নইলে দিনের পর দিন উত্তেজনা বেড়ে স্হানীয় মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।