কাপ্তাইয়ে প্রতিবন্ধী নারী ধর্ষণের শিকার: প্রথাগত বিচারে রায়, নীরব উপজাতি সংগঠনগুলো
![]()
নিউজ ডেস্ক
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের চংড়াছড়ি মুখ এলাকায় এক প্রতিবন্ধী মারমা নারীকে স্বজাতি তিন যুবকের হাতে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধারাবাহিক যৌন নির্যাতনের ফলে ওই নারী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত তিনজন হলেন — অনুচিং মারমা (৫০), কালা মারমা (৫৫) ও মং উ মারমা (৩৫)। এ ঘটনায় গত ১৭ অক্টোবর স্থানীয় প্রথাগত রীতিতে একটি সামাজিক বিচার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অভিযুক্ত তিনজনকে ভিকটিমের জন্য মোট তিন লাখ টাকা এবং সমাজের নামে শুকর ক্রয়ের জন্য অতিরিক্ত ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, একই বিচারে ভিকটিমকেও “সমাজের নিয়ম ভঙ্গের” দায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বিচার পরিচালনা করেন স্থানীয় কার্বারী অংমা খৈ মারমা, সাবেক মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান সিং থোয়াই উ মারমা এবং মংনু চিং মারমা। তারা জানান, “আমরা সমাজের নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টি সমাধান করেছি।”
সিং থোয়াই উ মারমা বলেন, “মহিলাটি পুরোপুরি সুস্থ নন। তিনজনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, পরে গর্ভবতী হন। তাই সমাজ মিলে তিন লাখ টাকা শিশুর ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে জমা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী বলেন, “বিচার হয়ে যাওয়ার পরে আমি ঘটনাটি জানতে পারি। এলাকার কার্বারীরাই সামাজিকভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছে।”
অপরদিকে, চন্দ্রঘোনা থানার ওসি মো. শাহজাহান কামাল বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। আমরা ভিকটিম ও তার পরিবারকে থানায় এসে অভিযোগ দিতে বলেছি, কিন্তু তারা এখনও অভিযোগ করেনি।”
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ওই এলাকা একটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক দলের সশস্ত্রবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভিকটিম পরিবারটি আতঙ্কের কারণে আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না।
নিরাপত্তা বাহিনীর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম, কিন্তু সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বাধার কারণে ভিকটিমকে উদ্ধার করা যায়নি।”
ভিকটিমের মা ও ভাই ছাড়া তার পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা সবাই আঞ্চলিকদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, যার প্রভাবের কারণে ভিকটিম পরিবার ভয় পাচ্ছে।
স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, “এই ঘটনা পাহাড়ে সামাজিক বিচারের নামে নারীর প্রতি সহিংসতার এক ভয়াবহ উদাহরণ। অপরাধীদের অর্থদণ্ড দিয়ে দায়মুক্তি দেওয়া বিচারব্যবস্থা নয়, বরং অবিচার।”
অভিযোগ উঠেছে, এই নৃশংস ঘটনার পরও পাহাড়ের প্রভাবশালী উপজাতি সংগঠনগুলো — ইউপিডিএফ, জেএসএস কিংবা কেএনএফ — কেউই কোনো নিন্দা বা প্রতিক্রিয়া জানায়নি। অথচ, কোনো বাঙালির বিরুদ্ধে পাহাড়ি নারীর প্রতি অভিযোগ উঠলেই এসব সংগঠন তাৎক্ষণিকভাবে আন্দোলন, প্রচার ও অপপ্রচারে নেমে পড়ে, যা অনেক সময় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, “এই দ্বিমুখী নীরবতা প্রমাণ করে, পাহাড়ে মানবাধিকারের প্রশ্নটি অনেক সময় রাজনীতির ছায়াতলে চাপা পড়ে যায়।”
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।