সুদানে বিমান বাহিনীর বোমাবর্ষণে ১৭০০ মানুষ নিহত
![]()
নিউজ ডেস্ক
সুদানের বিমানবাহিনী দেশটির আবাসিক এলাকা, বাজার, স্কুল ও বাস্তুচ্যুতদের শিবির লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। এতে অন্তত ১,৭০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। গৃহযুদ্ধ চলাকালে সেখানে বিমান হামলা নিয়ে এক তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
‘সুদান উইটনেস প্রজেক্ট’ বলেছে, সুদানে ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া সাম্প্রতিকতম লড়াইয়ে সরকারি বাহিনী (এসএএফ) যে-সব বড় বড় বিমান হামলা চালিয়েছে এবং তাতে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, সেসব তথ্য নিয়ে তথ্যভাণ্ডার প্রস্তুত করেছে তারা।
তাদের বিশ্লেষণ দেখায়, বিমানবাহিনী জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আনগাইডেড (নিয়ন্ত্রণহীন) বোমা ব্যবহার করেছে। আনগাইডেড বোমা বলতে এমন বোমা বোঝানো হয়, যা নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যে ছোড়া হয় না; বরং আকাশ থেকে ফেলার পর সেটি যে-কোনও এলাকায় পড়তে পারে। এতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়।
সুদান উইটনেস প্রজেক্ট শুধু যুদ্ধবিমান থেকে বোমা হামলা চালানোর ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর হাতে যুদ্ধবিমান আছে। কিন্তু তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী, প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কাছে কোনও যুদ্ধবিমান নেই।
আরএসএফ আকাশ থেকে হামলা চালাতে ড্রোন ব্যবহার করেছে। কিন্তু এ গবেষণায় ড্রোন হামলায় হতাহত ব্যক্তির সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
প্রজেক্ট পরিচালনাকারী মার্ক স্নুক বলেন, আমার মনে হয় এসএএফকে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হওয়া উচিত।
বিবিসির মন্তব্য জানতে চাওয়া অনুরোধের জবাব দেয়নি এসএএফ। তবে তারা পূর্বে দাবি করেছে যে তারা কখনো বেসামরিকদের লক্ষ্য করে না—তাদের বিমান হামলা শুধু আরএসএফের সমাবেশ, অবস্থান ও ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে, যেগুলো বৈধ সামরিক লক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃত।
সুদান উইটনেস হলো সেন্টার ফর ইনফরমেশন রেজিলিয়েন্সের (সিআইআর) পরিচালিত একটি উদ্যোগ, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো প্রকাশের কাজ করে। এ প্রকল্পের জন্য ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তহবিল পেয়েছে তারা।
বিবিসি ওই গবেষণা প্রতিবেদনের একটি আগাম অনুলিপি হাতে পেয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুদান উইটনেস ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত পরিচালিত ৩৮৪টি বিমান হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করেছে। এসব হামলায় ১ হাজার ৭০০-এর বেশি মানুষ নিহত ও ১ হাজার ১২০ জন আহত হয়েছেন। নিহত ও আহত উভয় সংখ্যাই আরও বেশি হতে পারে। কারণ, তারা সর্বনিম্ন সংখ্যা ধরে এ হিসাব করেছে।
সুদান উইটনেস যে ৩৮৪ ঘটনা বিশ্লেষণ করেছে, তার মধ্যে ৩৫টি ঘটনায় বোমাবর্ষণ করা হয় বাজার বা বাণিজ্যিক স্থাপনায়। হামলার সময় ওই সব স্থানে মানুষের ভিড় ছিল। আর ১৯টি হামলা হয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
সুদান উইটনেস স্বীকার করেছে, তাদের গবেষণা অসম্পূর্ণ। কারণ, তাদের ফলাফল মোট হামলার সংখ্যার ভিত্তিতে নয়; বরং তাদের কাছে থাকা তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
কনফ্লিক্ট ইনসাইটস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাস্টিন লিঞ্চ বিবিসিকে বলেন, সুদানের সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকরাই আরএসএফ ও এসএএফের মধ্যেকার লড়াইয়ের প্রধান শিকার।
তিনি বলেন, সুদানের সংঘাত মূলত বেসামরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। বিমান শক্তি ও ভারী অস্ত্র বেসামরিকদের ওপরই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে, সামরিক লক্ষ্যবস্তুর চেয়ে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।