একটি কলেজের অভাবে ব্যাহত উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম, স্থানীয়দের উদ্যোগেই গড়ে উঠছে শলক কলেজ - Southeast Asia Journal

একটি কলেজের অভাবে ব্যাহত উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম, স্থানীয়দের উদ্যোগেই গড়ে উঠছে শলক কলেজ

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার দুর্গম একটি উপজেলা জুরাছড়ি, যেখানে নেই কোন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পুরো উপজেলা জুড়ে সরকারী-বেসরকারী মিলে ৬৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আর উচ্চ ও নিম্ম মাধ্যমিক মিলিয়ে ৬টি বিদ্যালয় থাকলেও জুরাছড়ির শিশুদের শিক্ষার সর্বশেষ ঠিকানা এসএসসি। এর বাইরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে যেতে হবে রাঙামাটি সদর কিংবা অন্য কোন উপজেলায়। কিন্তু অভিভাবক হতদরিদ্র হওয়ায় সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অধরা থেকে যায়।

উচ্চ শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়া আর নৈতিক মূল্যবোধের চেতনা থেকে এবার স্থানীয়রাই উদ্যোগ নিলেন একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার। জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা, বনযোগীছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ বিকাশ চাকমা, হেডম্যান (মৌজাপ্রধান) করুণাময় চাকমা, শান্তশীল দেওয়ানসহ এলাকার শিক্ষানুরাগীরা কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে এসেছেন।

রাঙামাটির দুর্গম পাহাড়ি জনপদ জুরাছড়ি উপজেলায় শিক্ষার আলো ছড়াতে স্বেচ্ছাশ্রমে শলক কলেজের অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে এলাকাবাসী। এ উপজেলায় কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষার্থীদের যেতে হয় রাঙামাটি শহরে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী পরিবারের আর্থিক অভাবের কারণে দূরে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারছে না। লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে অনেকেই। এসব কথা চিন্তা করে উপজেলার কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ২০১৭ সালে শলক কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর ২০১৮ সালে শিক্ষার্থী ভর্তি করে পাঠদান শুরু হয়। বর্তমানে কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৮ জন। তবে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় এ কলেজের ছাত্রদের অন্য একটি কলেজের শিক্ষার্থী হয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে।

জানা গেছে, জুরাছড়ি উপজেলায় ৬১টি সরকারি ও চারটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তিনটি উচ্চ মাধ্যমিক ও তিনটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোনো কলেজ নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক পাস করার পর রাঙামাটি শহরে গিয়ে পড়ালেখা করতে হয়। এতে অনেক শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে কলেজে পড়াশোনার সুযোগ হয় না।

এ কারণে জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা, বনযোগীছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ বিকাশ চাকমা, হেডম্যান (মৌজাপ্রধান) করুণাময় চাকমা, শান্তশীল দেওয়ানসহ এলাকার শিক্ষানুরাগীরা কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ২০১৭ সালের দিকে শলক কলেজটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলেও ২০১৮ সালে বনযোগীছড়া ইউনিয়নের একটি ভাড়া বাসা নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। সম্প্রতি হেডম্যান করুণাময় চাকমা ও শান্তশীল দেওয়ান বনযোগী ইউনিয়ন এলাকায় দেড় একর জমি কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য দান করেন। বর্তমানে কলেজের নিজস্ব জমিতে স্বেচ্ছাশ্রমে অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করেছেন এলাকাবাসী। কলেজটি নির্মিত হচ্ছে উপজেলার বনযোগীছড়া গ্রামে। এলাকার হেডম্যান ৮০ শতক জমি দান করেছেন কলেজের নামে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই জমির জঙ্গল, আগাছা পরিষ্কার করে বাঁশের বেড়া ও টিনের কলেজ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন গ্রামবাসী। স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন তিন শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি ও গ্রামের লোকজন, তাদের মধ্যে কারও হাতে কোদাল আবার কারও হাতে মাটি ফেলার জন্য বস্তা, কারও হাতে দা। কেউ করছেন জঙ্গল পরিস্কার, কেউ মাটির কাজ। স্বপ্ন একটাই- তাদের সন্তানরা এ কলেজ থেকে লেখাপড়া করে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবে।

জানা গেছে, নির্মাণাধীন ওই কলেজটির নাম রাখা হয়েছে শলক কলেজ। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে এই কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত হয়েছেন এলাকার শিক্ষানুরাগী সর্বস্তরের লোকজন।

উক্ত এলাকার বয়ষ্ক গঙ্গা দেবী চাকমার স্বপ্ন ছিলো তার বড় মেয়ে চম্পা চাকমাকে নিয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে চিকিৎসক বানানোর। কিন্তু ২০০৬ সালে এসএসসি পাস করার পর আর্থিক কারণে আর পড়ালেখা করা হয়ে ওঠেনি চম্পার। মেয়ের মতো আর কারও লেখাপড়া যেন বন্ধ হয়ে না যায় সেজন্য তিনি
বৃদ্ধ বয়সে কলেজে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন। স্থানীয় বনযোগীছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ বিকাশ চাকমা বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে একাডেমি ভবনের জন্য ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের কাঁচা বেড়া এবং টিনের ঘর নির্মাণ করা হবে। এতে শ্রেণিকক্ষ থাকবে আটটি।

শলক কলেজের অধ্যক্ষ রায়খান আলী জানান, জনস্বার্থে তিনি কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলে ভালোভাবে পাঠদান শুরু হবে। আর কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, কলেজটি এমপিওভুক্তির জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কলেজটি চালু হলে এলাকার শত শত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার দুয়ার খুলবে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহফুজুর রহমান জানান, জুরাছড়িতে একটি কলেজ খুবই জরুরি। অনেক অভিভাবকের রাঙামাটি শহরে রেখে সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর সামর্থ্য নেই। প্রশাসন থেকে জুরাছড়িতে সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দেওয়া রয়েছে। জুরাছড়িবাসী কলেজ নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসার যোগ্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।