ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের ২২ মাস: রোহিঙ্গাদের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের আয়োজন
![]()
নিউজ ডেস্ক
গত শীতে কক্সবাজারের উখিয়ার ঠ্যাংখালীর রোহিঙ্গা শিবির থেকে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমানদের যে দলটি ভাসানচরে পৌঁছেছিল, হাফেজ আহমেদ তাঁদেরই একজন।
তিন মেয়ে, দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে রাখাইনের চাকমাকাটার সাবেক বাসিন্দা হাফেজ স্বেচ্ছায় কক্সবাজার ছেড়ে ভাসানচরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পোলিও আক্রান্ত ৩৭ বছরের এই রোহিঙ্গা মনে করেন, কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় তাঁর চলাফেরাটা দুরূহ ছিল। কিন্তু ভাসানচরে পৌঁছানোর পর হুইলচেয়ারে বসে একাই চলতে–ফিরতে পারেন; যা নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা।
গতকাল বুধবার ভরদুপুরে যেসব রোহিঙ্গা জীবিকার সামগ্রী পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন, হাফেজ তাঁদের একজন। হাফেজের জন্য বরাদ্দ হয়েছে একটি রিকশা। সেটি ভাড়া দিয়ে পরিবারের লোকজনের মুখে আগের তুলনায় কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেবেন, এমনটাই তাঁর আশা।
বুধবার দুপুরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জীবিকা নির্বাহের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ৫১২টি পরিবারের মধ্যে ছাগল এবং ১১ ধরনের জীবনধারণের সহায়ক সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। এতে প্রায় ১ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা উপকৃত হবে। ভাসানচরের ওয়্যারহাউসের সামনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রোহিঙ্গারা জীবিকা নির্বাহের সামগ্রীগুলো নিতে সমবেত হন। ঘণ্টা দুয়েকের ওই অনুষ্ঠানে এসে তাঁরা সামগ্রীগুলো বুঝে নেন। এরপর ফিরে যান স্বস্তি নিয়ে।
বুধবার সেখানে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে হাফেজসহ বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ, তরুণ মিলিয়ে অন্তত ২০ জন রোহিঙ্গার কথা হয়। কক্সবাজারের শিবিরে গাদাগাদি করে থাকার চেয়ে ভাসানচরে তাঁরা অনেকটা খোলামেলা ও নিরাপদে থাকার কথা জানিয়েছেন। তবে যেভাবেই হোক, নিজেদের নাগরিক অধিকার নিয়ে তাঁদের সবাই রাখাইনে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছেন।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে জীবন ও জীবিকার জন্য যে ১২ ধরনের সামগ্রী দেওয়া হয়, তার মধ্যে ছিল ঝাকিজাল ১১৫টি, ১৫০টি সেলাই মেশিন, ৩০টি রিকশা–ভ্যান, ৩০টি এমব্রয়ডারি আইটেম, ১৫০টি ছাগল, ২টি কম্পিউটার, ২ সেট স্ক্যানার, ফটোকপি ও প্রিন্টার, ১২ সেট চুল কাটার সরঞ্জাম, ১০ সেট জুতা সেলাইয়ের সরঞ্জাম, ১০ সেট রিকশা-ভ্যান মেরামতের সামগ্রী, ১টি ডিজিটাল ক্যামেরা ও চার সেট খেলাধুলার সামগ্রী।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের জুলাই মাসে সরকার প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের মধ্যে জীবিকা নির্বাহের সামগ্রী বিতরণ করেছিল। সেবার অন্তত ২ হাজার ৮০০ মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য ছাগল, হাঁস, মুরগি ও মাছের পোনার পাশাপাশি ৯ ধরনের সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছিল।
বুধবার এসব সামগ্রী বিতরণ শেষে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গাদের জীবিকায়নের অংশ হিসেবে বাছাই করে তাঁদের মধ্যে নানা ধরনের সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১২ দফায় কক্সবাজার থেকে ৩০ হাজার ৮৬১ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে শিশু ১৩ হাজার ৮৪২, নারী ৮ হাজার ৯২২, পুরুষ ৮ হাজার ৯০ এবং তৃতীয় লিঙ্গের সাতজন রয়েছে। সরকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করতে চায়। বাকি রোহিঙ্গাদের আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু হবে।
আশ্রয়ণ–৩ প্রকল্পের পরিচালক কমোডর এম রাশেদ সাত্তার বলেন, এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে এক হাজারের বেশি পরিবারকে জাল দেওয়া হয়েছিল। নদী ও খাল থেকে তারা মাছ ধরছে। মিয়ানমারে থাকা অবস্থায় যাঁরা যেসব কাজে দক্ষ ছিলেন, সেভাবে দক্ষতা বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের জীবিকার সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।