রোহিঙ্গাদের হাতে সহজেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট!
![]()
নিউজ ডেস্কঃ
২০১৭ সালে নিজ দেশের সেনাবাহিনী কর্তৃক ব্যাপক অত্যাচারের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে বাংলাদেশী পাসপোর্ট তুলে দিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু দালাল আর কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশী দালালরা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে চাকরীর লোভ দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে এরপর নিজেদের অথবা আত্নীয়-স্বজনদের কারো নিকটত্নায়ীয় ও রক্তের সম্পর্কের বন্ধন দেখিয়ে করে ফেলছেন বাংলাদেশী পাসপোর্ট। এরপর ভিসার কাজ। ইমিগ্রেশনে কীভাবে কথা বলতে হবে সেটাও ভালোভাবে শিখিয়ে দেওয়া হয় রোহিঙ্গাদের।
কিছুদিন আগে বেনাপোলে সন্দেহজনক কথাবার্তায় ৩ রোহিঙ্গাকে আটক করে কাস্টমস। এরপর তাদের নামে মামলাও দেয়া হয়। মামলার পর ‘যশোর রাইটস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন আটক তিন রোহিঙ্গাকে কাউন্সেলিং করে। এতে উঠে এসেছে মুন্সীগঞ্জ জেলার এসবি শাখায় কর্মরত পুলিশ সদস্য এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সদস্যদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরির তথ্য। এ ছাড়া রোহিঙ্গা নারীদের ভারত-থাইল্যান্ডে পাচারের পর যৌনপল্লীতে এবং যুবকদের দাস হিসেবে বিক্রির ভয়ঙ্কর ফাঁদের তথ্য উঠে আসে।
যশোর রাইটসের নির্বাহী পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক বলেন, রোহিঙ্গারা এত দ্রুত সময়ে জাল-জালিয়াতি করে যেভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেয়েছে, তা কোনো বাংলাদেশির পক্ষেও সম্ভব ছিল না। ভুক্তভোগীদের কাউন্সেলিংয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানা গেছে, বাংলাদেশি পরিচয় ধারণে তাদের কোনো কাগজপত্র সংগ্রহ বা খাটুনির প্রয়োজন পড়েনি। পাসপোর্ট পেতে যত কাগজপত্র লাগে, সবকিছু দুই দালালই করে দিয়েছে। এতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কিছু লোক এবং ভেরিফিকেশনের দায়িত্বে থাকা জেলার ডিএসবি পুলিশ সদস্যদের সহায়তা ছিল। এতে তারা বড় অংকের টাকা পেয়েছে।
বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক আরও বলেন, বেনাপোলে আটক রফিকুল ইসলাম ও জামাল খান আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য। তারা রোহিঙ্গা অবিবাহিত তরুণী ও যুবকদের উচ্চ বেতনের চাকরির লোভ দিয়ে নারীদের যৌনপল্লীতে এবং যুবকদের দাস হিসেবে বিদেশে বিক্রির অপচেষ্টায় ছিল। এর আগেও বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে ভারতে পাচারের সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ রোহিঙ্গা মেয়েদের উদ্ধার করে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবপাচারকারী দালালরা বিচরণ করছে। তারা কম বয়সী, অবিবাহিত ও সুশ্রী রোহিঙ্গা নারীদের বিদেশে চাকরির লোভ দেখিয়ে পাচার করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে এ রোহিঙ্গাদের জন্য নাগরিকত্ব সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহের কাজটিও করে দালালরা। তবে ভেরিফিকেশনের সময় মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের ডিএসবি শাখা অর্থের বিনিময়ে জেনেশুনে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে ইতিবাচক প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। আর পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাও ঘুষের বিনিময়ে দ্রুত সময়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট সরবরাহ করেন।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রদানের অভিযোগ এখনও আমার কাছে এসে পৌঁছায়নি। তবে মুন্সীগঞ্জে যে কটি জাল-জালিয়াতির পাসপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলোয় কীভাবে ভেরিফিকেশন হয়েছে সে বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত শুরু হবে।