উখিয়াসহ ৩ সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আসছে মিয়ানমারের গরু
নিউজ ডেস্ক
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল মিয়ানমার থেকে আনা গরু চোরাকারবারিরা। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর সম্প্রতি আবার তারা সক্রিয় হয়ে উঠছে। সীমান্ত পথে কৌশল পাল্টিয়ে গরুর বড় চালান আনা হচ্ছে। তবে এবার মিয়ানমারের গবাদিপশুর মধ্যে ক্ষুরারোগ (ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ) ছড়িয়ে পড়েছে।
এ কারণে দেশটি থেকে পশুর আমদানি বন্ধ করে দেয় থাইল্যান্ড। রফতানি নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি পোষাতে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা চোরাই পথে এখন কক্সবাজার, বান্দরবান, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে গবাদিপশুর পাচার অব্যাহত রাখছে। সম্প্রতি এ চোরাচালান আরো বেড়েছে বলে জানায় সীমান্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত এ চোরাচালান বন্ধ করা না গেলে দেশের গবাদিপশুর মধ্যে ক্ষুরারোগের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ দিকে সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে আসা গরু-মহিষের কারণে বিপাকে পড়েছেন দেশীয় পশু খামারি ও ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ একাধিক উপজেলায় মিয়ানমারের গবাদিপশু দেদারছে ঢুকছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এসব পশুর অধিকাংশ রাখা হয় রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়ন, কচ্ছপিয়া ও চকরিয়ার বিভিন্ন স্থানে। এমনকি মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা ওসব পশুদের বেচাবিক্রির জন্য হাটও বসছে কোনো কোনো এলাকায়। পাচারের সাথে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে। রাজনৈতিকভাবে একে অন্যের প্রতিপক্ষ হলেও পাচার-সংশ্লিষ্টতা ও ব্যবসার ক্ষেত্রে তারা একাট্টা।
স্থানীয় খামারিরা জানান, সীমান্ত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে হাটে অনেক মিয়ানমারের গরু-মহিষ বিক্রি হচ্ছে। সেসব হাট-বাজারে দেশী গরু বিক্রি করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি বিক্রি করতে গেলেও দেশী গরুকে তারা চোরাচালানের পশু আখ্যা দিয়ে জব্দ করে নেয়। স্থানীয় পর্যায়ে এ নিয়ে বিতর্ক ও একের পর এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে হাটে চোরাচালানের গবাদিপশু বিক্রি বন্ধে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। যদিও তা খুব একটা কার্যকর নয় বলে স্থানীয় খামারিরা জানায়। তারা বলছেন, হাটে দেশী গরু-মহিষ বিক্রি করতে এখন স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন হয়। এ প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে হয়রানিতে পড়েন দরিদ্র কৃষক অথবা খামারিরা।
জানা গেছে, মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদম-লামা এবং নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে প্রবেশ করা এসব পশুর হাট বসে চকরিয়ার মানিকপুর বাজার, ফাঁসিয়াখালীর হাঁসের দীঘি ও ডুলাহাজারার রংমহল এলাকায়। এখান থেকে প্রতিদিন শতাধিক গবাদিপশু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি বিজিবি অভিযান চালিয়ে লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, রামুর গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও চকরিয়ার মানিকপুর থেকে অনেক গরু-মহিষ জব্দ করে। এ ছাড়া নাইক্ষ্যংছড়ির নিয়ন্ত্রণাধীন তীরডেপা বিজিবি ক্যাম্প থেকে মানিকপুর এলাকায় অভিযান চালিয়েও গরু জব্দ করা হয়। পরে জব্দকৃত পশুগুলো উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে সেই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়।
কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু ইসমাঈল মো: নোমান বলেন, মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে আসা এসব গবাদিপশু নিয়ে সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো ক্ষুরারোগ। এ রোগ একবার ছড়িয়ে পড়লে দেশীয় গবাদিপশুও আক্রান্ত হবে। অন্য দিকে মিয়ানমারের গরু ঢোকায় স্থানীয় খামারিরা লোকসানের মুখে পড়ছে। স্থানীয় খামারি আমানুল হক বলেন, বর্তমান বাজারে পশুখাদ্যের দাম বেশ চড়া। তার পরও বেশি দামে খাদ্য কিনে গবাদিপশু লালন-পালন করছি। কিন্তু চোরাইপথে গরু ঢোকার কারণে বাজারে দাম পাচ্ছি না। লোকসান গুনতে হচ্ছে। আমাদের খামারে পালিত গবাদিপশুকে উল্টো পাচারের গরু অভিযোগ তুলে বিক্রি করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। আমরা পড়েছি উভয় সঙ্কটে। আয়ুব আলী ও ছুরত আলম নামে আরো দুই ব্যবসায়ীও একই অভিযোগ তুলে বলেন, চোরাই গরু জব্দ করতে গিয়ে স্থানীয় খামারি ও কৃষকের গোয়ালের গরুও জব্দ করে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে।
চোরাইপথে আসা রোগাক্রান্ত গবাদিপশুর বিষয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা: সাহাবউদ্দিন বলেন, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ খুবই মারাত্মক এবং ছোঁয়াচে। সামান্য গাফিলতিতে ভাইরাসঘটিত এ রোগ দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। সীমান্ত দিয়ে পশু প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব। বর্তমানে বাংলাদেশ গোশতের দিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই বিদেশ থেকে পশু আমদানির প্রয়োজন নেই।
স্থানীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সীমান্ত পাহারায় বিজিবি সবসময় প্রস্তুত। চোরাচালান ও অবৈধ গরু প্রবেশ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সেই সাথে গরুর হাট বসা ও পাড়া-মহল্লায় পাচার বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।