রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে পাইলট পরিকল্পনা স্থগিত করুন: এইচআরডব্লিউ
নিউজ ডেস্ক
রোহিঙ্গা ফেরাতে মিয়ানমার সরকারের প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্পে বাংলাদেশকে সাড়া না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
গত ৩১ মার্চ শুক্রবার সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা স্থগিত করা। কারণ, জান্তার অধীনে রোহিঙ্গাদের জীবন ও স্বাধীনতা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
পাইলট প্রকল্পের আওতায় এক হাজার থেকে ১৫০০ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা করছে মিয়ানমার সরকার। দেশটির একটি প্রতিনিধি দল গত ১৫-১৭ মার্চ কক্সবাজার ক্যাম্প পরিদর্শন করে। ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। জান্তা কর্মকর্তারা তাঁদের প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য টেকনাফ ক্যাম্পে ১৪৯ পরিবারের ৪৪৯ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেন। জান্তার একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, পাইলট প্রকল্পটি এপ্রিলের মাঝামাঝি শুরু হতে পারে।
তবে রোহিঙ্গারা এইচআরডব্লিউকে জানিয়েছে, সাক্ষাৎকার কাদের সঙ্গে হবে কিংবা কোন দেশে প্রত্যাবাসন করা হবে, এসব বিষয়ে প্রথমে তাদের সঠিক তথ্য দেওয়া হয়নি। তৃতীয় কোনো দেশে প্রত্যাবাসন করা হবে বলেও ভুল বোঝানো হয়েছে অনেককে।
এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন এখন সম্ভব নয়। কারণ, সামরিক জান্তা সারাদেশে গণহত্যা চালাচ্ছে এবং রাখাইন রাজ্যে বর্ণবাদী আচরণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত জান্তা কর্মকর্তাদের পরিকল্পনায় যুক্ত না হওয়া। রোহিঙ্গারা তখনই নিরাপদে ফিরতে পারবে, যখন দেশটিতে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালায় মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। ফলে ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়েছে। কারণ, গণহত্যায় নেতৃত্ব দেওয়া সামরিক নেতারাই এখন ক্ষমতায়।
এইচআরডব্লিউ বলছে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে বাধ্য করেনি। আন্তর্জাতিক দাতাদের সহায়তায় রোহিঙ্গারা যেভাবে অবস্থান করছে, তা চলমান রাখা উচিত। এইচআরডব্লিউ ১৫ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে তাঁদের যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার নিয়ে কথা বলেছে। তাঁদের অভিযোগ, গত দুই বছরে এ রকম আরও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তাঁরা। তবে এ যাবৎ কোনো তালিকায় তাঁদের যুক্ত করা হয়নি। একজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, সাক্ষাৎকারে না গেলে তাঁকে পুলিশের ভয় দেখানো হয়েছিল।
মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা বাংলাদেশের উচিত হবে না। সঠিক সময়ে প্রত্যাবাসন করতে হবে। তাদের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা দিতে হবে। এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বর ও ২০১৯ সালের আগস্টে দুটি প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।