কেএনএফ তথাকথিত অধিকারের ধুয়ো তুলে অস্ত্র হাতে নিয়েছে- স্টুয়ার্ড লিন বম
আজ আমাদের উপর যা হচ্ছে তার সবকিছুর দায়ভার কেএনএফকে নিতে হবে। কেএনএফ তথাকথিত অধিকারের ধুয়ো তুলে অস্ত্র হাতে নিয়েছে। রাষ্ট্র বিরোধী অনেক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছে৷ রাষ্ট্র শক্তির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে। আমরা বম বা কুকি জাতিরা অনেক অসহায় ও পিছিয়েপড়া। শিক্ষা-দীক্ষা, সুযোগ-সুবিধা এবং উন্নত জীবনযাপন থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছি৷ যেখানে আমাদের বেছে থাকা প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম৷ প্রকৃতির প্রতিকূল পরিবেশ এবং নানা বাধা-বিপত্তির কারণে আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা, শিক্ষ ও চিকিৎসা উন্নত হচ্ছেনা। কর্মসংস্থানের কোনপ্রকার ব্যবস্থা নেই। সবমিলিয়ে বলতে গেলেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় যেটা সবসময় অবর্ণনীয় থাকে সেটা হলো- সরকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করতে গেলে আঞ্চলিক সন্ত্রাসীরা নানা অজুহাতে প্রবল বাধা সৃষ্টি করে। এর পেছনের রহস্য হলো: এলাকায় উন্নয়ন করলে বিলুপ্ত হবে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি। তাই তাদের প্রতিবান্ধকতা সবসময় থাকে।
আমাদের পিছিয়ে থাকা এবং অধিকার বিষয়ক এসব দাবিদাওয়াগুলো আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে উত্থাপন করতে পারতাম। কিন্তু কেএনএফ তা না করে অস্ত্রের মাধ্যমে দাবিদাওয়া পেশ করে আমাদের পুরো বম বা কুকি জনগোষ্ঠীকে এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কী প্রয়োজন আমাদের স্বায়ত্তশাসন বা কুকি ল্যাণ্ড? এই কল্পিত স্বপ্ন বা দাবি আমাদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে নিয়ে গেছে। যা রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত।
আজকে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানছি জুড়ে যা হচ্ছে শুধুমাত্র কেএনএফ এর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার কারণেই হচ্ছে৷ কেএনএফ একটি শান্তপ্রিয় জনপদকে নিজের স্বার্থ হাসিলের বিপদগ্রস্ত করেছে। কেএনএফের অপরাধের শাস্তি বা দায়ভার কেন আমাদের নিরীহ মানুষদের নিতে হবে?
আমি স্টুয়ার্ড লিন বম, বান্দরবান রুমা উপজেলার বাসিন্দা। পেশায় খেটে খাওয়া মানুষ হলেও একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মানবতা নিয়ে সবসময় সরব থাকার চেষ্টা করি৷ পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে কর্ম সম্পাদন করে আমি আমার পরিবারের জীবিকা নিবার্হ করি। অন্যায়কে অন্যায় বলার চেষ্টা করি। কালোকে সাদা বলার মন মানসিকতার আমি নই। আমার পরিষ্কার কথা হলো- বম জনগোষ্ঠীর মধ্যে যেসব ব্যক্তিরা কেএনএফ কে আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের যথাযথ শাস্তি হোক। আমি রাষ্ট্র বা নিরাপত্তা বাহিনীর বর্তমান নীতি কিংবা আইনী কর্মকাণ্ডের পক্ষে। কিছু জড়িত বম ও দুষ্কৃতকারী সন্ত্রাসীদের কারণে পুরো জাতি কেন কষ্ট পাবে? তাদের অপকর্মের দায়ভার কেন সমস্ত জাতি বহন করবে? আজকে দোকানপাট ও হাটবাজারে যেতে আমাদের ভয় হচ্ছে৷ আমরা সর্বদা নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে থাকি। একদিকে কেএনএফ চাঁদা আদায় করার জন্য আমাদের অস্ত্রের ভয় দেখাচ্ছে অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আতঙ্কে থাকি। কেননা কেএনএফ নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান থেকে নিজেদের রক্ষা করতে লোকালয়ে মিলেমিশে গেছে৷ কে সাধারণ মানুষ আর কে কেএনএফ তা চিহ্নিত করা কঠিন। সব একাকার হয়ে গেছে। এখন আমাদের এই সমস্যা থেকে পরিক্রাণ পেতে হলে অবশ্যই কেএনএফ কে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা যদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করি বা তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হই তাহলে আমরা আইনের মুখামুখি হতে হবে। তাই আমি সকল বম জাতি বলবো আমাদের আগে কেএনএফ কে অন্ধ সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেএনএফ যেন আমাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপকর্ম করতে না পারে সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পুরো জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর আগে আমাদের প্রলব্ধ করে আমাদের অগোচরেই অনেক অপকর্ম করেছে। যার পরিণতি আমরা সবাই ভোগ করে আসতেছি। তাই আমাদের পূর্বের নীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে৷
লেখক: স্টুয়ার্ড লিন বম, সমাজ সেবক, রুমা বান্দরবান। ১২/০৫/২০২৪।