খাগড়াছড়ির ঘটনায় উস্কানি ভারতের, হস্তক্ষেপ করতে মোদীকে অনুরোধ ত্রিপুরার মন্ত্রীর
নিউজ ডেস্ক
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সদর উপজেলার পানখাইয়া পাড়ায় মোটর সাইকেল চুরির অপবাদ দিয়ে এক বাঙ্গালী যুবককে উপজাতিগোষ্ঠী কর্তৃক পিটিয়ে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় জেলার দীঘিনালায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঙ্গালী শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায় পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল ইউপিডিএফ ও জেএসএস কর্মীরা। এসময় বাঙ্গালী শিক্ষার্থীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে সেখানে দুপক্ষের ব্যাপক সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়।
পরবর্তীতে পাশ্ববর্তী বাঘাইছড়ি ও লংগদু বেশকয়েকটি চাঁদের গাড়িতে করে এসে দীঘিনালায় বাঙ্গালীদের উপর হামলা চালায় উপজাতি সন্ত্রাসীরা। এসময় তারা বোয়ালখালী বাজারসহ লারমা স্কয়ারে পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী ও আসা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও সড়কে আটকে দেয় তারা। এতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় প্রায় ৯০টি দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।
পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। একাধিক আহত বক্তিকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে একজনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে রাতে পানছড়ি সড়কের নালকাটায় সেনাবাহিনীর রোগী বহনকারী একটি গাড়ি আটকে দিয়ে হামলার চেষ্টা চালায় ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও বিজিবির আরো কয়েকটি টহল দল আটকে পড়া গাড়িকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে গেলে তাদের উপর অতর্কিত গুলি চালায় ইউপিডিএফের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এসময় আত্নরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে সেনাবাহিনীও। দুপক্ষের গোলাগুলির ঘটনায় দুজন ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী নিহত হবার খবর পাওয়া যায়। এছাড়া এ ঘটনায় একটি ম্যাগাজিনসহ এক ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী আটক ও আহত নিরীহ পথচারিসহ পাহাড়িদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী।
এরপর পুরো জেলা জুড়ে তান্ডব চালায় ইউপিডিএফ ও জেএসএস সন্ত্রাসীরা। জেলা গুইমারা, লক্ষ্মীছড়ি, রামগড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থানে হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও বাঙ্গালীদের উপর হামলা চালিয়ে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে তাৎক্ষনিক দীঘিনালা, জেলা সদর, পানছড়ি ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বেশ কয়েকটি সভা করে সশ্প্রীতি রক্ষায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ১৪৪ ধারা জারি করা হয় খাগড়াছড়িতে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার ঘোষনা দেয় প্রশাসন।
এমনকি এ ঘটনার রেশ ধরে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসার মুখোমুখি হয় পাশের জেলা রাঙামাটিও। জেএসএস এর ইন্ধনে সন্ত্রাসীরা মসজিদ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সরকারি দপ্তর, পরিবহনে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করে। এ সহিংসতায়ও একজন নিহত হন।
সহিংসতা এড়িয়ে সম্প্রীত গড়ে তুলতে ও সবাইকে ধৈর্য ধরার আহবান জানিয়েছেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও। এছাড়া আজ রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পরিদর্শনে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও পার্বত্য উপদেষ্টাসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
ঠিক যখনই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসে, তখনই পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশের এই ঘটনাকে নিয়ে ছড়ানো হয় অপপ্রচার। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানান খাগড়াছড়ির পাশ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের এক মন্ত্রী।
ত্রিপুরার শিল্প ও বাণিজ্য, জেল (হোম) এবং ওবিসি কল্যাণ বিভাগের মন্ত্রী সান্তনা চাকমা মোদীকে লেখা চিঠিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাঙ্গালিদের সংগঠিত হামলায় ৪০ জন নিরীহ পাহাড়ি নিহত হয়। ১০০টির বেশী দোকান ও বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে ফেলা হয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসল ও বাগান। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য নিরীহ সংখ্যালঘুদের উপর অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের এই ধরনের জঘন্য হামলার ফলে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন এবং ভয়ে অনাহারে পতিত হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে ’’
এ ঘটনায় মোদীকে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করে ত্রিপুরার ওই মন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘আমি আন্তরিকভাবে অনুরোধ করব আপনি দয়া করে এই বিষয়ে একটি হস্তক্ষেপ করুন যাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী নিরীহ সংখ্যালঘুরা আমার শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে।’’
এদিকে, ত্রিপুরা রাজ্য চাকমা ইয়ুথ অর্গানাইজেশনও তাদের প্যাডে বিস্তারিত বিবরণ সহ নরেন্দ্র মোদীকে একটি চিঠি দিয়েছেন। তারাও সেখানে পাহাড়ের ঘটনাকে রং লাগিয়ে অতিরঞ্জিত হিসেবে উল্লেখ করে একই ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন চাকমা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও ভারতীয় মানবাধিকার কমিশনের এনজিও কোন গ্রুপের মেম্বার সুহাস চাকমা, ত্রিপুরার সাবেক মন্ত্রী নিরুপম চাকমা, মিজোরামের চাকমা অটোনিমাস ডিস্ট্রিক কাউন্সিলের নির্বাহী সদস্য রাশিক মোহন চাকমা, ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়া ডিস্ট্রিক কাউন্সিলের সদস্য বিমলা চাকমা, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সাইন্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান প্রফেসর গৌতম চাকমা, অরুণাচল প্রদেশের চাকমা-হাজং রাইটস এলায়েন্স এর সদস্য প্রীতিময় চাকমা ও অল আসাম চাকমা সোসাইটির সভাপতি আশুতোষ চাকমা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার মিলনপুর এলাকার বাসিন্দা অর্ণব চাকমা বলেন, ‘আমাদের এলাকার পরিবেশ ভালো আছে। কিন্তু নানাভাবে ছড়ানো হয় যে রাতে হামলা হতে পারে। আমরা সারারাত জেগে ছিলাম। সবাই আতঙ্কে রাত কাটিয়েছি। একজনকে পিটিয়ে মেরেছে। তার বিচার চাইতে পারে। কিন্তু সেটি তো সাম্প্রদায়িক ইস্যু হতে পারে না। এখানে বাহিরের কেউ উস্কানি দিচ্ছে ’
পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আসাদ উল্লাহ বলেন, ‘পাহাড় নিয়ে বহু বছর ধরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলে আসছে। সশস্ত্র সংগঠনগুলো সাম্প্রদায়িক সংকট তৈরি করে পাহাড়কে অস্থির রাখতে চায়। এসব ঘটনা ঘটিয়ে তারা বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা করে জুমল্যান্ড করার স্বপ্ন দেখছে। এখানে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে। এখনই এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
পাহাড় নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকজন বলছেন, পাহাড় নিয়ে বিদেশী ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। এবারের ঘটনায়ও বিদেশী ইন্ধন থাকতে পারে। এ বিষয়ে সরকার ও প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। ভারত যেহেতু প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সবসময় নাক গলাতে চেষ্টা করেছে সেহেতু ভারত বিশেষ নজরে রাখতে হবে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।