মিয়ানমারে প্রতারণা চক্রের আস্তানা থেকে মুক্ত বাংলাদেশিসহ ২৬০ বিদেশি

মিয়ানমারে প্রতারণা চক্রের আস্তানা থেকে মুক্ত বাংলাদেশিসহ ২৬০ বিদেশি

মিয়ানমারে প্রতারণা চক্রের আস্তানা থেকে মুক্ত বাংলাদেশিসহ ২৬০ বিদেশি
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

মিয়ানমারের কারেন রাজ্যে একটি টেলিকম প্রতারণা কেন্দ্রে কাজ করতে বাধ্য করা ২০টি দেশের ২৬০ জনকে মুক্ত করেছে একটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী। মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশিরাও রয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্ধারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তাদের গ্রহণ করেছে থাই সেনাবাহিনী এবং তারা মানব পাচারের শিকার হয়েছেন কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে।

সম্প্রতি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রা চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে প্রতারণা কেন্দ্র বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর থাই সরকার সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত এসব প্রতারণা কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। পাশাপাশি ব্যাংকিং ও ভিসার নিয়ম কঠোর করা হয়, যাতে প্রতারকেরা থাইল্যান্ডকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।

দুই বছর ধরে থাইল্যান্ডের বিরোধী দলগুলো প্রতারণা চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। সাধারণত প্রতারকেরা বিদেশি কর্মীদের উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে থাইল্যান্ডে নিয়ে আসে। পরে তাদের জোরপূর্বক মিয়ানমারে বন্দি রেখে বিভিন্ন প্রতারণামূলক কাজে নিয়োজিত করা হয়।

বন্দিদের দিয়ে সাধারণত ‘পিগ বুচারিং’ নামে পরিচিত প্রেমের ফাঁদ, ক্রিপ্টো প্রতারণা, অর্থ পাচার ও অবৈধ জুয়া পরিচালনা করানো হতো। কিছু কর্মী ইচ্ছাকৃতভাবে এসব কাজে যুক্ত থাকলেও অনেককে আটকে রেখে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করা হতো। পালিয়ে আসা ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে চরম নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

ডেমোক্রেটিক কারেন বেনেভোলেন্ট আর্মি (ডিকেবিএ) নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী সম্প্রতি ২৬০ জন বন্দিকে মুক্ত করে থাইল্যান্ডের কাছে হস্তান্তর করেছে। তবে কারেন রাজ্যের বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই প্রতারণা চক্রগুলোকে রক্ষা করার অভিযোগও রয়েছে।

গত মঙ্গলবার থাইল্যান্ডের বিশেষ তদন্ত বিভাগ (ডিএসআই) কারেন ন্যাশনাল আর্মির তিন কমান্ডারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছে। এর মধ্যে অন্যতম সাও চিত থু, যিনি ২০১৭ সালে চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ‘শ্বে কোক্কো’ নামে একটি নতুন শহর গড়ে তোলেন। ধারণা করা হয়, প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়েই এই শহর নির্মাণ করা হয়েছে।

বিবিসি শহরটি পরিদর্শন করে দেখেছে, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইয়াতাই দাবি করছে, এখন সেখানে কোনো প্রতারণামূলক কার্যক্রম নেই। তবে স্থানীয়দের মতে, প্রতারণার কার্যক্রম গোপনে এখনো চলছে এবং একজন কর্মী জানিয়েছেন, তিনি সেখানে কাজ করেছেন।

চাপের মুখে সাও চিত থু ও ডিকেবিএ ঘোষণা দিয়েছে, তারা তাদের এলাকা থেকে প্রতারণার কার্যক্রম সরিয়ে নেবে। এরপরই ডিকেবিএ’র এক কমান্ডার একজন থাই সাংসদের মাধ্যমে বন্দিদের মুক্তির ব্যবস্থা করেন।

মুক্তি পাওয়া ২৬০ জনের মধ্যে ২২১ জন পুরুষ ও ৩৯ জন নারী। তারা ইথিওপিয়া, কেনিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, নেপাল, উগান্ডা, লাওস, বুরুন্ডি, ব্রাজিল, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারত, ঘানা ও কম্বোডিয়ার নাগরিক। তবে বাংলাদেশি নাগরিকদের সংখ্যা ও পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।