সেনাবাহিনীর মানবিকতাঃ পাহাড়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে বম সম্প্রদায়

২৩ মাস পর সেনা সহায়তায় নিজভূমে ফিরে এলো বম সম্প্রদায়ের ১৫টি পরিবার
নিউজ ডেস্ক
এবার দীর্ঘ ২৩ মাস পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় নিজভূমে ফিরে এলো বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি উপজেলার বাকলাই পাড়ার বম সম্প্রদায়ের ১৫টি পরিবারের ৮১ জন সদস্য। পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট- কেএনএফের অত্যাচারের প্রায় ২ বছর পূর্বে তারা নিজ বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড ও বান্দরবান রিজিয়ন অধিনস্ত ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহায়তায় তারা পুনরায় নিজ গ্রামে প্রবেশ করে।
এসময় পাড়াবাসীকে বাকলাই সেনাবাহিনীর সাব জোন ক্যাম্প কর্তৃক খাবার পরিবেশন করা হয়। সেনাবাহিনীর এমন মানবিকতায় এবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে এসব বম সম্প্রদায়ের গ্রামবাসী।
জানা যায়, নিরাপত্তাবাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে পরিস্থিতি স্বাভাবিকহয়ে আ্সলে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও বান্দরবান রিজিয়ন কমান্ডারের সুচিন্তিত পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা থানচি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাকলাই পাড়ায় পুনরায় স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য ফেরত আসেন।
এদিন ফেরত আশা এই পরিবারগুলোর মানবেতর জীবন যাপনের কথা মাথায় রেখে মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড ও বান্দরবান রিজিয়নের অন্তর্গত ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পাড়াবাসীদের নিজেদের পক্ষ হতে রেশন সহায়তার পাশাপাশি, প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি তেল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি লবণ, ২ কেজি আটা, এবং ২ কেজি চিনি প্রদান করে।
এছাড়া, পাড়ার বাসিন্দাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী একটি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করে, যেখানে সাধারণ চিকিৎসা, প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং ওষুধ বিতরণ করা হয়।
পরবর্তীতে সকল গ্রামবাসীর জন্য ক্যাম্পের পক্ষ থেকে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করা হয়।
এদিকে, অস্বাভাবিক পরিস্থিতির দরুন ভেঙে যাওয়ার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরায় চালু করার জন্য কোমলমতি শিশুদের মাঝে শিক্ষা সহায়তাও প্রদান করা হয়েছে। সেনাবাহিনী শিক্ষাব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য পাড়ার শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপকরণ ও টিউশন সুবিধা প্রদান করেছে, যাতে তারা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।
সেনাবাহিনীর ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক এর পক্ষে বাকলাই সেনা সাব জোনের অধিনায়ক উপস্থিত থেকে এসব সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করেন।
আরও পড়ুনঃ সেনা সহায়তায় দশ মাস পর নিজ গ্রামে ফিরল কেএনএফ আতঙ্কে পালিয়ে যাওয়া বম সম্প্রদায়
বাকলাই পাড়ার বর্তমান কারবারি লাল চম থাং বম (৬৮) বলেন, কেএনএফ বাহিনীর নির্যাতন, হুমকি ও লুটপাটের দরুন আমরা দীর্ঘ ২৩ মাস বন ও জঙ্গলে ছিলাম। বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। সেনাবাহিনী আমাদের বাসস্থান ফিরিয়ে দিয়েছে, আমাদেরকে নতুন জীবন দিয়েছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় আমরা এবার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহায়তা পাচ্ছি, যা আমাদের জন্য এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
আরেক নারী বাসিন্দা সুমহেপন বম (৫০) জানান, ‘দীর্ঘ সময় বনজঙ্গলে পালিয়ে খুব কষ্টে জীবন কাটাতে হয়েছে। বাড়িতে ফিরে এবং সেনাবাহিনীর সহায়তা পেয়ে আমাদের মনে শান্তি ফিরে এসেছে। এখন আমরা আশা করি আমাদের সন্তানরা শিক্ষার সুযোগ পাবে এবং স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হবে।’
বাকলাই সেনা সাব জোন অধিনায়ক জানান, ‘বাকলাই পাড়া পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকাতে অবস্থিত। তাই আমরা স্থানীয়দের নিরাপত্তা ও সহায়তার জন্য গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছি এবং তাদের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করছি। বর্তমানে আমরা শুধু রেশন, মেডিকেল সহায়তা ও শিক্ষা উপকরণই নয়, আরও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজেও সাহায্য প্রদান করে যাচ্ছি।’
দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর নিজেদের পাড়ায় ফিরে এসে এই পরিবারগুলোর জীবনে এক নতুন সূচনা হয়েছে, যেখানে তারা নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা সহায়তা পেয়ে আরও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৬ মার্চ পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ কেএনএফ (কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) এর নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে বাকলাই পাড়ার ২৮টি পরিবার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে যায়। সেনা সহায়তায় ২৮টি পরিবারের মধ্যে ১৫টি পরিবার তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে এসেছে।
এর আগে, গত ২২ জানুয়ারী সেনাবাহিনীর ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহায়তায় বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলার সীমান্তবর্তী রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের বম পাড়ার ১০টি পরিবারের ২৬ জন সদস্য নিজ বাড়িতে ফিরেছেন।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।