পাহাড়ে সন্ত্রাসবাদ ও মিডিয়ার দায়বদ্ধতা

পাহাড়ে সন্ত্রাসবাদ ও মিডিয়ার দায়বদ্ধতা

পাহাড়ে সন্ত্রাসবাদ ও মিডিয়ার দায়বদ্ধতা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

রাঙামাটিতে আজ ইউপিডিএফ ও জেএসএস দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে এক ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে, সংবাদমাধ্যমগুলো যখন এই খবর প্রচার করছে, তখন ওই সন্ত্রাসীকে ‘ইউপিডিএফ নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করছে, যা গভীরভাবে চিন্তার বিষয়। এটি শুধু মিডিয়ার ভুল ত্রুটি নয়, বরং এটি একটি গুরুতর বিষয়, যা আমাদের সমাজে সন্ত্রাসবাদকে সরাসরি প্রশ্রয় দেয় এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে বৈধতার চেহারা দেয়।

সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো, যেমন ইউপিডিএফ-জেএসএস, কেএনএফ নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে, আধিপত্য ধরে রাখার জন্য সহিংসতা এবং অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে, নিরীহ মানুষের জীবন বিপন্ন করছে। যখন একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বা তার সদস্যকে ‘নেতা’ বা ‘যোদ্ধা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তখন এটি তাদের কার্যকলাপকে সাধারণ মানুষের কাছে এক ধরনের বৈধতা প্রদান করে। আসলে, এই সন্ত্রাসীরা কোনো রাজনৈতিক নেতার মতো নয়, তারা খুন, ধর্ষণ, অপহরণ এবং সন্ত্রাসী হামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের কর্মকাণ্ড কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়, এবং এসবকে ‘নেতৃত্ব’ বা ‘যুদ্ধ’ হিসেবে চিহ্নিত করা কেবল সমাজে সন্ত্রাসবাদী মনোভাব ছড়াতে সাহায্য করে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন মিডিয়ার দায়িত্বে ঘাটতি এবং অবহেলার প্রতিফলন। সংবাদমাধ্যমগুলোর উচিত এমন পরিস্থিতিতে সঠিক ভাষা ব্যবহার করা, যাতে জনগণ বুঝতে পারে যে এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো দেশের জন্য কোনো ভালো কিছু করছে না। তাদের কার্যকলাপের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা, জনগণকে ভয় দেখিয়ে নিজেদের কপালে শোষণ স্থাপন করা। যদি মিডিয়া তাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে নেতাদের মতো উপস্থাপন করে, তাহলে সেটা একটি বিপজ্জনক প্রবণতা তৈরি করে। এটি এক ধরনের অপসংস্কৃতি প্রচার করা, যা দেশব্যাপী সন্ত্রাসী মনোভাবের বিস্তার ঘটাতে পারে।

মিডিয়ার একমাত্র দায়িত্ব হওয়া উচিত সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করা, এবং এমন সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে সমাজে গ্রহণযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন না করা। সংবাদমাধ্যমের ভুল উপস্থাপনা কেবল সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে না, বরং এটি একটি ভিন্ন ধরনের সমাজিক নৈতিকতার সংকট তৈরি করে, যেখানে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে একটি বৈধ পথ হিসেবে দেখানো হয়।

বাড়িয়ে বলা যায়, সংবাদমাধ্যমগুলোকে যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে না পারে, তাহলে তারা অগত্যা সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং তাদের কর্মকাণ্ডকে এক ধরনের প্রশ্রয় প্রদান করে। সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতির প্রকাশ কিংবা তাদের ‘নেতা’ হিসেবে উপস্থাপন করা এক ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহিতার সঙ্গেই সম্পর্কিত।

অতএব, এই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা হওয়া উচিত, যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে ভুলভাবে প্রশংসা না করে, আমাদের মিডিয়াকে দায়িত্বশীল, নিরপেক্ষ এবং সঠিক সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। এই ভুল তথ্যে সন্ত্রাসবাদীদের বৈধতা না দেওয়ার মাধ্যমে, একটি নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে সহায়তা করতে হবে। সন্ত্রাসবাদকে ‘নেতৃত্ব’ বা ‘যুদ্ধ’ হিসেবে উপস্থাপন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, এবং এর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে, যাতে তারা নিজেদের ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করতে পারে।

মোঃ সাইফুল ইসলাম।
সাউথইস্ট এশিয়া জার্নাল।