স্বায়ত্তশাসনের নামে বিচ্ছিন্নতাবাদ বরদাশত নয়: পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বক্তারা
![]()
নিউজ ডেস্ক
পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আজ শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর মহাখালীর এসকেএস টাওয়ার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, স্বায়ত্তশাসনের নামে বিচ্ছিন্নতাবাদ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। দেশের সার্বভৌমত্ব ও সংবিধানের প্রশ্নে কোনো আপস না করে সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
“পার্বত্য চট্টগ্রামের উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর স্বায়ত্তশাসনের দাবি, বিরাজমান সমস্যা ও সমাধানের উপায়” শীর্ষক এই আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী দেশের প্রতিটি নাগরিকের এ ভূখণ্ডে বসবাস, চলাফেরা ও সম্পত্তির মালিকানা লাভের সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির কিছু ধারা সংবিধানবিরোধী এবং তা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণ করে বলেও মত প্রকাশ করা হয়।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শুধু একটি ভৌগোলিক অঞ্চল নয়, বরং এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এর উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিক ঘিরে রয়েছে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল, মায়ানমার ও বঙ্গোপসাগর। এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। এ প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্মরণ করেন তারা।
আলোচনায় বক্তারা অভিযোগ করেন, পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে একদিকে যেমন পার্বত্য বাঙালিদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে, অন্যদিকে তথাকথিত ‘আদিবাসী স্বায়ত্তশাসন’ চর্চার নামে দেশের অভ্যন্তরে আরেকটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর দাবি তোলা হচ্ছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত ও বিপজ্জনক।
তারা বলেন, সমতলের কোনো নাগরিক পার্বত্য অঞ্চলে জমি কিনে বসতি গড়তে না পারলেও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সদস্যরা সমতলে সে সুযোগ ভোগ করেন। এ বৈষম্য সংবিধানের ৩৬ ও ২৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
বক্তারা আরও বলেন, পার্বত্য এলাকার প্রকৃত উন্নয়নের জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়, প্রয়োজন জাতীয় মূলধারায় সম্পৃক্তকরণ। পাহাড়ি জনগণের প্রকৃত উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভূমির মালিকানা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এ সময় বক্তারা উল্লেখ করেন, পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষ শান্তিপ্রিয় ও নিরীহ, বাকি ৫ ভাগ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
সভায় বক্তারা ‘এক দেশ, এক নীতি’-র পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেন, কোনো জনগোষ্ঠী, অঞ্চল বা গোষ্ঠীর স্বতন্ত্র রাষ্ট্রীয় কাঠামোর দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। পার্বত্য এলাকা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি অসাংবিধানিক এবং বাস্তবতাবিবর্জিত উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাস বন্ধ হলে সেনাবাহিনী এমনিতেই ব্যারাকে ফিরে যাবে।
সভায় জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধানে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যকর রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
সভায় লে. কর্নেল (অব.) ফরিদুল আকবরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন রিয়ার এডমিরাল মুস্তাফিজুর রহমান, লে. জেনারেল (অব.) মতিউর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল লতিফ মাসুম, ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া, লে. কর্নেল (অব.) শাহদাত হোসেন, মেজর (অব.) সারোয়ার হোসেন, লে: কর্নেল (অব.) হাফিজুর রহমান বীরপ্রতীক, লে. কর্নেল (অব.) ফেরদৌস আজিজ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।