লেফটেন্যান্ট জি এম মুশফিকুর রহমান, বীর উত্তম’র ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”
![]()
নিউজ ডেস্ক
আজ ৮ সেপ্টেম্বর, বীর উত্তম লেফটেন্যান্ট জি এম মুশফিকুর রহমানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী।
১৯৮৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর, রাত আনুমানিক আড়াইটা। স্থান, চেলাছড়া, দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি।
লেফটেন্যান্ট মুশফিক তার ১৭ জন রেইডার এবং একজন গোপন সংবাদদাতা (সোর্স) নিয়ে দীর্ঘ চার ঘণ্টা হেঁটে টার্গেট এলাকায় পৌঁছান। লক্ষ্মীছড়ি ক্যাম্প থেকে রওনা হয়ে সাতটি ছড়া ও ছয়টি উঁচু পাহাড় পেরিয়ে আসতে হয়েছে। সোর্সের পথচেনা থাকায় দূরত্বের তুলনায় সময় কম লেগেছে। গঙ্গারামছড়া পার হয়ে রেইডাররা অ ‘স্ত্রের কাদা-বালি পরিষ্কার করে নেন। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট সাইদের দলও উল্টাছড়ি গ্রামের কাছে খালের পশ্চিম তীরে অবস্থান নিয়েছে বলে ওয়্যারলেসে খবর পাওয়া যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে সাইদ এগিয়ে আসবেন।
অন্ধকারে মুশফিক পাহাড়ের গায়ে লুকানো জুমঘর শনাক্ত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু মেঘলা আকাশের কারণে দৃষ্টিসীমা সীমিত। সোর্সের সাহায্যে দুটি জুমঘর শনাক্ত হয়—একটি পাহাড়ের পাদদেশে, অন্যটি চূড়ার কাছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মুশফিক হাবিলদার মেজবাহর পাঁচজনের দলকে পাদদেশের টার্গেটে রেখে ফিরে আসেন। এরপর হাবিলদার নজরুলের ছয়জনের রিজার্ভ দলকে অবস্থানে পৌঁছে দিয়ে বাকি পাঁচজন নিয়ে পাহাড়ের চূড়ার দিকে রওনা হন।
প্রায় ৪০ মিনিট সতর্কতার সঙ্গে পাহাড়ে উঠে তারা জুমঘরের ৫ গজ দূরে পৌঁছান। রেইডাররা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অবস্থান নেন। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে ওঠে, শত্রু ও রেইডাররা একে অপরকে দেখে ফেলে। কে আগে গুলি চালায় তা অজানা, তবে মুহূর্তের মধ্যে তুমুল গোলাগুলি শুরু হয়। মুশফিকের অ’স্ত্র থেকে সম্ভবত প্রথম গু ‘লি বেরোয়, আর শত্রুর প্রথম গু ‘লি তাকেই লক্ষ্য করে। কাছাকাছি দূরত্বে গুলি লাগায় কভার নেওয়ার সুযোগ পাননি তিনি।

আহত মুশফিকের কথা ভেবে রেইডাররা মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। তিনি ব্যথা সহ্য করে ‘ফা’ ‘য়ার’ বলে চিৎকার করেন। পরের পাঁচ মিনিটে রেইডাররা শত্রুকে গু ‘লিতে ঝাঁ’ ঝরা করে। গোলাগুলি শেষে মুশফিক সবাইকে নিরাপদে উঠে আসার নির্দেশ দেন। সার্চে তিনটি মৃতদেহ, দুটি রাইফেল, গোলাবারুদ ও শান্তি বাহিনীর ইউনিফর্ম পাওয়া যায়। বাকিরা পালিয়ে যায়।
সাইদ তার দল নিয়ে এগিয়ে আসেন। মুশফিক অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে দুর্বল হয়ে পড়েন। হাবিলদার নজরুলকে ট্রেসার রাউন্ড ফায়ার করে সাইদের দলকে পথ দেখাতে বলেন। ভোর সাড়ে পাঁচটায় সাইদ পৌঁছালে মুশফিক প্রায় অচেতন। সাইদ হেলিপ্যাড তৈরির কাজ শুরু করেন। চট্টগ্রাম থেকে হেলিকপ্টার ছুটে আসে। মুশফিকের রানার তাকে কোলে নিয়ে অসহায়ভাবে বলেন, “গুলিটা আমার গায়ে লাগল না কেন, স্যার?”
মুশফিকের সামনে মা-বাবার মুখ ভেসে ওঠে, তারপর নয় দিন আগে শান্তি বাহিনীর বো ‘মায় নি ‘হত হাবিলদার হারুন, ল্যান্স নায়েক সুনীল ও ড্রাইভার নাজমুল হুদার মুখ। তিনি রানারকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, “তোমার সংসার আছে, তুমি মরলে তাদের কী হবে? আমি মরলে কারও ক্ষতি হবে না।”
সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে হেলিকপ্টার এসে পৌঁছায়, কিন্তু মুশফিক ততক্ষণে চিরতরে চলে গেছেন। সাতক্ষীরায় তার মায়ের মন অস্থির।
লেফটেন্যান্ট জি এম মুশফিকুর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী
১৯৬৬ সালের ৩০ নভেম্বর সাতক্ষীরার পারুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন মুশফিক। তার পিতা মো. আব্বাস আলী গাজী। তিনি বিএমএ’র ১৫তম লংকোর্সে যোগ দিয়ে ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারিতে কমিশন পান। লক্ষ্মীছড়ি ক্যাম্পের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বাহিনীর বিদ্রোহ দমনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। বহু সেনা প্রাণ দিয়েছেন, অনেকে পঙ্গু হয়েছেন। মুশফিকের মতো বীররা দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় প্রাণ দিয়েছেন। তাদের ত্যাগ ও বীরত্ব নতুন প্রজন্মের প্রেরণা।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।