চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়া যাবে না: ঢাবিতে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির বিক্ষোভ সমাবেশ
![]()
নিউজ ডেস্ক
দেশের কৌশলগত প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি অপারেটরের হাতে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু স্কয়ারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় আয়োজিত এ সমাবেশ থেকে সংগঠনটির নেতারা অভিযোগ করেন, দুর্নীতি ও সক্ষমতা বৃদ্ধির অজুহাতে অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে অদ্ভুত তাড়াহুড়া দেখাচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, এপিএম টার্মিনালস এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডকে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনালগুলো লিজ বা কনসেশনে দেওয়ার উদ্যোগের পেছনে দেশবিরোধী ভূ–রাজনৈতিক স্বার্থ কাজ করছে। বক্তাদের দাবি, ভারত, ইসরাইল, আরব আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন কৌশলগত জোট—যেমন আব্রাহাম চুক্তি, ইন্দো–আব্রাহাম কোঅর্ডিনেশন ও আইটুইউটু—ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দক্ষিণ এশিয়ায় বিস্তৃত প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর তাদের নিয়ন্ত্রণে গেলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক কূটনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বক্তারা আরও বলেন, দুর্নীতির কারণে বন্দর ব্যবস্থাপনায় সমস্যা থাকলে দেশীয় অপারেটরদের প্রশিক্ষণ, কাস্টমস অটোমেশন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা সমাধান করা যেত। কিন্তু বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্দর চলে গেলে জট কমবে না, দুর্নীতি কমবে না, বরং দেশীয় অপারেটররা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ‘চাকর’ হয়ে যাবে। নিউমুরিং টার্মিনাল দেশীয় ব্যবস্থাপনায় ইতিমধ্যেই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পণ্য হ্যান্ডেল করছে—তাহলে সেটি বিদেশিদের কাছে দেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়, সে প্রশ্নও তারা তোলেন।

সমাবেশে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিদেশি অপারেটররা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নীতি, বৈদেশিক সম্পর্ক ও সার্বভৌম সিদ্ধান্ত গ্রহণে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এমনকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দেওয়া, সামরিক–অর্থনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তি এবং রাষ্ট্রের কৌশলগত তথ্য পাচারের মতো ঝুঁকির কথাও বক্তারা উল্লেখ করেন। দেশের সংকটময় মুহূর্তে তারা ‘বন্দরের টুটি চেপে ধরে’ বিদেশি আনুগত্য চাপিয়ে দেওয়ার আশঙ্কাও ব্যক্ত করেন।
অর্থনৈতিক প্রভাবের প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, দেশের ৯০ শতাংশ আমদানি–রপ্তানি চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ায় এর নিয়ন্ত্রণ বিদেশিদের হাতে গেলে রিজার্ভে চাপ বাড়বে, কর্মসংস্থান কমবে, ট্যারিফ বাড়ায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে এবং দেশীয় উদ্যোক্তারা দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেশীয় মালিকানাহীন ‘একটি কামলা শ্রেণি’তে পরিণত হওয়ার আশঙ্কাও তুলে ধরেন তারা।

আয়োজিত সমাবেশে ‘স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টি’-র আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক, দপ্তর সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম, জুবায়েদুল ইসলাম শিহাব, জাবির বিন মাহবুব ও আহমেদ রেজাসহ বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল টিএসসি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত যাত্রা করে।
উল্লেখ্য, সমাবেশ থেকে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে নিউমুরিং টার্মিনালের লিজ চুক্তি এবং এপিএম টার্মিনালস ও মেডলগ এস–এর সঙ্গে অন্যান্য টার্মিনালের চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। দাবিতে পদক্ষেপ না এলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন সংগঠনের নেতারা।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।