সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্য ও অতি উৎসাহীদের বাড়াবাড়ি

সেনাবাহিনী প্রধানের বক্তব্য ও অতি উৎসাহীদের বাড়াবাড়ি

সেনাবাহিনীসেনাপ্রধানের ‘ফুল স্টপ’ থেকে আমি যে বার্তা পেলাম প্রধানের বক্তব্য ও অতি উৎসাহীদের বাড়াবাড়ি
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর, পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় ভাবে পালিত হয়েছে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস। যথাযথ মর্যাদায় দেশব্যাপী দিবসটি পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শহীদ সেনাসদস্যদের ১৬তম শাহাদত বার্ষিকী স্মরণে ঢাকার বনানীস্থ সামরিক কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শাহাদত বরণকারী সেনাসদস্যদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সরকার ও বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানগণ।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানও নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানের সাথে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন। এরপর তিনি আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে মহাখালীস্থ রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) এর হেলমেট হলে রাওয়া কর্তৃক শোকসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এরপর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যও রাখেন।

তার বক্তব্যটি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম সরাসরি সম্প্রচারও করেছে। এরপরপরই দেশ ও বিদেশে তার বক্তব্যকে ঘিরে নানা আলোচনা তৈরী হয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবকে বাস্তবে রুপ দেয়ার কারিগর সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকারের আজকের বক্তব্য নিয়ে তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন নেটিজেনরা। কিন্তু বিপরীত কিছু কিছু প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে।

স্বার্থান্বেষী একটি মহল ইতিমধ্যে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চক্রান্তে লেগে গেছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে দেশ ও বিদেশে বসে সেনাপ্রধানের ওই ‍যুগান্তকারী বক্তব্য নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের প্রচেষ্টাও করছেন কেউ কেউ।

এসব নোংরামি দেখে আমিও সেনাপ্রধানের ওই বক্তব্যটি শুনেছি। একবার না, বেশ কয়েকবার শুনে খুঁটি-নাটি বোঝার চেষ্টা করেছি।

বিশেষ একটি গোষ্ঠী সােমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে, সেনাপ্রধান আয়না ঘরের গুম-হত্যায় জড়িত র‌্যাব, ডিজিএফআইসহ অন্যান্যদের বিচার না করার কথা বলেছেন; এই দাবিটি পুরোপুরি মিথ্যা। বক্তব্যের একটি অংশে সেনাবাহিনী প্রধান স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ‍পুলিশ, র‌্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর অবদানের কথা তুলে ধরছেন। এমনকি তিনি ভালো কাজের পাশাপাশি এসকল বাহিনী/সংস্থার বিভিন্ন অপরাধের কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এসব অপরাধের সাজা হতে হবে, না হলে ভবিষ্যতেও এসব অপরাধ পুনরায় হবে। এর জন্য তিনি এসব সংস্থাকে অবজ্ঞা (আন্ডার মাইন্ড) না করে একটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার সম্পন্ন করার অনুরোধ করেন। এসব সংস্থাকে হেয় করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা কঠিন বলে জানান তিনি। এসময় তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণ হিসেবে পুলিশের বিশাল সংখ্যক সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা ও জেল খাটার প্রসঙ্গকে টেনে আনেন। এছাড়া তিনি প্রসঙ্গ টেনে বলেন, র‌্যাব, বিজিবিসহ অন্যান্য সংস্থা বর্তমানে প্যানিক অবস্থায় আছে। ঢালাও দোষারোপের কারনে এখন দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নাজুক। তিনি বলেন, দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তদন্ত অবশ্যই চলছে। দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, তবে এমন ভাবে কাজটা করতে হবে; যেন এই সংস্থাগুলো আন্ডার মাইন্ড না হয়। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব শুধু সেনাবাহিনী না, পুলিশ-বিজিবি-র‌্যাবসহ সকল সংস্থার বলেও মনে করিয়ে দেন তিনি।

বিশেষ ওই মহলটি বলছে, সেনাপ্রধান বিডিআর বিদ্রোহের পুনরায় তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উদ্ঘাটন ও প্রকৃত দোষীদের বিচার না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আদতে তিনি বলেছেন, পিলখানা হত্যাকান্ডে কোন সেনা সদস্য নং বরং বিডিআরের সদস্যরাই জড়িত ছিলো। সুতরাং গত ১৬ বছরের বিচারিক প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত না করে এ ঘটনায় কোন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, দেশী বা বিদেশী শক্তি জড়িত কিনা তা তদন্ত কমিশন বের করবে এবং তা সবাইকে জানাবে। কেউ কেউ এ বিষয়টাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি। কেউ কেউ দাবি করেছেন, সেনাবাহিনীর শাস্তি পাওয়া সদস্যদের কেউ কেউ অযাতিত ভাবে (বিনাদোষে) জেল খাটছেন, এটার জন্য একজন একজন লেঃ জেনারেল সহ একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। ইতিমধ্যে ওই বোর্ডের দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি কাজ করছেন বলেও জানান। কেউ অপরাধ করে থাকলে বিন্দুমাত্রও ছাড় না দেয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি।

স্বার্থান্বেষী ওই মহলটির দাবি, আজ জেনারেল ওয়াকার তার বক্তব্যে ডঃ ইউনূসের নামের পূর্বে একবারের জন্যও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা- এই কথাটি ব্যবহার করেন নাই। সে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে সরাসরি ডক্টর ইউনুস- এভাবে এড্রেস করেছে। অর্থাৎ সে স্পস্টতই বর্তমান সরকারকে উপেক্ষা করছে ও একপ্রকার হুমকি দিচ্ছে।’ অথচ বাস্তবতা হলো সেনাবাহিনী প্রধান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উপেক্ষা ও হুমকি দেননি বরং বক্তব্যের ফ্লো’তে হয়তো তিনি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা শব্দটি ব্যববহার করতে ভুলে গেছেন। তাই বলে প্রধান উপদেষ্টাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে ঠিক এমনটা ভাবাও একটা অজ্ঞতা। এইতো কিছুদিন আগেই তিনি বিদেশী একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করে দেশ পরিচালনায় সর্বাত্নক সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন। অথচ বিশেষ একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল তার সেদিনের সেই কথাটা ভুলে গিয়ে আজকের এই বক্তব্যকে ঘিরে ষড়যন্ত্রের ছক আঁকছে।

সেনাবাহিনী প্রধানের আজকের বক্তব্যের একটি অংশ উদ্ধৃত করে বলতে হয়, কেন জানিনা সেনাবাহিনীর ও সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতি একটি মহল সবসময় অন্তরে বিদ্বেষ পোষন করেন এবং ষড়যন্ত্র করেন। জেনারেল ওয়াকারের আজকের বক্তব্যটি বেশ কয়েকবার শোনার পর মনে হলো একজন সিপাহসালার বিদ্ধস্ত নগরীতে দাঁড়িয়ে পথহারা জাতিকে ঐক্য সাম্যের পথে আহবান জানাচ্ছেন। জেনারেল ওয়াকারের উপদেশকে কাজি লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হতে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানের দারপ্রান্তে।

পরিশেষে বলতে হয়, জুলাই বিপ্লবকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া সেনাবাহিনীকে যে জাতি মাত্র ছয় মাসেই ভুলে যায়, যে জাতি তার উপকারীর উপকার স্বীকার করোতো দূরে থাক বরং মাত্র ছয়মাসের মাথায় তাদের ভিলেনের কাঁতারে দাঁড় করায়; সে জাতির কপালে দুঃখ আছে। সামনে ঘোর অন্ধকার আচ্ছন্ন করে আসছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

You may have missed